তৃষ্ণার্ত পাখির মতো

তোমার নিকটে গিয়ে ইচ্ছে হলো বলি,-
‘আমার অনেকগুলো অক্ষরবিহীন কবিতার
খসড়া লুকিয়ে আছে তোমার শাড়ির
ভাঁজে ভাঁজে, খুঁজতে এসেছি। আমি কিছু
বলার আগেই বললে তুমি,
‘কী-যে করো, এত দেরি করে আসার কী মানে, বলো?
একটু সময় নেই, এক্ষুণি বেরুতে হবে, বাই।
আমি কি দুমড়ে গেছি কালবোশেখির লাগাতার
চড়-খাওয়া গাছের ডালের মতো? যাও তুমি
যেখানে যাবার, চলে যাও দ্বিধাহীন।

তোমার আতিথ্য ঢের নিয়েছি দুহাত পেতে। আজ
না হয় বরাদ্দ রেশনের কিছু ভাগ
রাখলে গোপনে কেটে। সান্ত্বনা আমার চুলে বিলি
দ্যায় আর থুতনি নাড়িয়ে
বসে বসে নাড়ু খেতে বলে নিরিবিলি। ঘটনাটা
সকালে কাচের ঘরে স্বপ্ন বৈ তো নয়।

এখন কোথায় যাবো? উদ্দেশ্যবিহীন ঘোরাঘুরি
চৈত্রের দুপুরে আজ লাগবে কি ভালো? তিন চার
মাইল হাঁটার পরে পার্কে বসে কাটাবো সময়,
অথবা দাঁড়াবো একা নদীর কিনারে? কত আর
ঢেউ গুণে, খেয়া পারাপার দেখে, শুনে
বেদেনির গান অভিমানী পাখিটাকে অবেলায়
রাখবো পাড়িয়ে ঘুম। এখন তোমাকে
উষ্মার লালচে ফণা দেখাতেও ইচ্ছে হয় না। বরং হেসে
ভাঙা কাচ আরো গুঁড়ো হতে
দেখে যাবো ক্রমাগত। তুমি ভুলে যাবে
ছয় সাত মিনিট আগেও আমি এখানে ছিলাম। দুটি চোখ
তৃষ্ণার্ত পাখির মতো ঠোঁট ঘঁষে উদাসীনতার
পাথরে বিদায় নেবে। যদি জ্যোতিহীন হয়, তবে ক্ষতি কার?
কয়েক বছর পরে, হয়তো কালই, তুমি সেজেগুজে
অথবা মামুলি শাড়ি শরীরে জড়িয়ে,
খোলা চুল, প্রসাধনহীন
থাকবে ড্রইংরুমে বসে চুপচাপ কিংবা দেবে গড়াগড়ি বিছানায়
একাকিনী ব্যাকুল আমারই প্রতীক্ষায়। সে আসবে,
সে আসবে’, বলবে তোমার হৃৎস্পন্দন। কিছুতেই
হবে না আমার আসা। বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে যার
সকল নিঃশ্বাস, তার কোনো আসা-যাওয়া নেই।