তুমি আমার সুরে

এতকাল পরে তুমি কি অক্ষর সমুদ্র থেকে এক-গা ফেনা সমেত
উঠে এসেছো? না কি প্রকৃতই
একজন মানবীর অবয়ব আছে তোমার?

বাস্তবিকই তোমার চোখের অমন সুন্দর তারা নেচে ওঠে কিনা
দেখে নিতে চাই, দেখে নিতে চাই
স্পর্শ করলে তুমি হাওয়ায় মিলিয়ে যাও কিনা
অথবা মাখনের মতো গলে গলে নিশ্চিহ্ন হও কিনা।
আহত হলে তোমার মুখ
কতটা আর্ত হয়ে ওঠে,
দেখে নিতে চাই।

পড়ন্ত বেলায় দৈবদয়ায়
হঠাৎ হলো আমাদের জানাজানি।
আমাদের দৃষ্টিতে
চোখের নিমেষে দীঘল দূরত্ব-পেরুনো
বিস্ময়ের বিদ্যুচ্চমক ছিল।
সে মুহূর্তে আমি বলতে পারতাম সহজেই-
আরে কী কাণ্ড, কতকাল পরে দেখা,
ভালো আছো তো?

ইদানীং আমি ভালো আছি কি নেই, তা নিয়ে
তেমন মাথা ঘামাই না আর।
আমার সামনে আততায়ী, পেছনে আততায়ী,
ডান-বাম দু’দিকই অরক্ষিত আমার।
ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র আমার নেই।

অনেকটা দিন-আনি দিন-খাই ধরনের
জীবন যাপন করছি
আর তোমাকে নিয়ে প্রহরে প্রহরে নির্ঘুম
গড়ছি এক অক্ষর জগত,-
যেখানে নিমেষে রাতকে দিন আর দিনকে রাত করা যায়।
এই যেমন এখন তুমি আমার পাশে নেই, অথচ
দিব্যি তোমার হাতে হাত রেখে বসে থাকতে পারি,
তোমাকে পাশে নিয়ে টপকে যেতে পারি খানা খন্দ,
তোমাকে বিহ্বল করতে পারি চুম্বনে চুম্বনে।

ভালো কথা, তোমার কি মনে পড়ে
আমাদের সেই প্রথম মিলন আদিম গুহায়,
চর্বির আলোয় বড় বেশি রহস্যময় যুগ্মতা?
আমাদের গায়ের বাকল এক কোণে পড়ে ছিল,
কোনো কবির বাতিল স্তোত্রের মতো,
তোমার মনে পড়ে?

পথ চলতে প্রত্যহ কত নাম শুনি আশে পাশে,
কিন্তু তোমার নাম ছাড়া
এমন মধুর আবৃত্তিযোগ্য আর কোনো নাম আছে এ শহরে?
এ শহরে বসবাস করে হাজার হাজার রমণী,
শুধু তোমার ওষ্ঠের জন্যে জমিয়ে রাখি আমার সকল চুমো।

তুমি আমার,
এ-কথা ভাবতে পারি বলেই
আনন্দ আমার কাঁধে হাত রাখে এখনো।
কিন্তু যে জমিনে দাঁড়ানো আমরা দু’জন
তাই ইজারা নিয়েছে শয়তান।

সে আমাদের দুজনকে দু’দিকে
ঠেলে দিতেই ব্যস্ত সারাক্ষণ;
এরই মধ্যে প্রত্যহ সকালবেলা শরীরময় নিউজপ্রিণ্টের গন্ধ নিয়ে
বাংলাদেশ বিলি হয় গেরস্ত ঘরে, ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে
দপ্তরে দপ্তরে। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে আমি
এই হতচ্ছাড়া সময়কে তুমুল দুয়ো দিতে দিতে
নৈরাশ্যের কাদাভরা গর্তগুলি
টপকে যেতে যেতে
গলায় সরোদের ঝংকার তুলে
যদি আমার যাবতীয় শুভেচ্ছা
প্রত্যহ পৌঁছে দিতে পারতাম ঘরে ঘরে।
তুমি আমার সুর মেলাবে সুচেতা?