তুষার-কবরে

এই কবিতা কি লিখতে পারবো শেষ পর্যন্ত?
‘তুমি নেই’ শব্দ দু’টি লাফিয়ে-ওঠা
মাছের মতো আমাকে স্পর্শ করার সঙ্গেই
আমার কলম ছাড়লো দীর্ঘশ্বাস,
আমার কবিতা লেখার খাতা জুড়ে
পোড়োবাড়ির হাহাকার;
নিমেষে ঝাপসা হয়ে এল বর্ণমালা, স্বরবর্ণ থেকে
ব্যঞ্জনবর্ণের পার্থক্য বোঝা
যাচ্ছিল না কিছুতে। না-লেখা পঙ্‌ক্তি দু’টির চোখে
জমে ওঠে শিশির।

শীতার্ত আঙুলের আলিঙ্গনে আমার কলম স্থবির;
জানলায় তোমার মুখ
রাখলে কী করে এই ভরসন্ধ্যায়? তোমার চোখ,
স্বর্ণাত গাল আর রঙিন ঠোঁট এমন জীবন্ত যে,
এই দৃশ্যটিকে দৃষ্টিভ্রমের ফল বলে ভাবতে পারা গেল না।
জানলা আর দেয়াল ভেদ করে নিশ্চিত
তুমি এসে দাঁড়াবে পাশে, বসবে শূন্য চেয়ারে,
খেলবে শাড়ির আঁচল নিয়ে, টেবিল থেকে
হাতে তুলে নেবে নতুন কোনো কবিতার বই অথবা
কোনো লিটল ম্যাগাজিন। হয়তো
গাঢ় তাকাবে আমার দিকে, পাঠ করতে চাইবে
আমার মুখের রেখাবলীর টেক্সট।
এসব কিছুই ঘটবে না; কেননা জানলায় তোমার
মুখ ছিল না, সেখানে এই মুহূর্তে
অনুপস্থিতির কুয়াশাময় ঊর্ণাজাল
ঝুলছে এবং আমার সত্তায়
তুষারাবৃত মেরুপ্রদেশের তীক্ষ্ণ নির্জনতায়।
এক পর্যটকের ছায়া আর ক্ষুধার্ত নেকড়ের চিৎকার।

কাঙ্ক্ষিত কবিতাটি শেষ পর্যন্ত তুমিহীনতার
তুষার-কবরে জমে থাকবে চিরকাল।