ভাগ্যিস মৃত্যুর সঙ্গে

কী রকম হয় যদি আমি নিউ মার্কেটে অথবা সিনেমায়
না গিয়ে এখন উপকূল এলাকায়
চলে যাই? মনে-মনে যাই নি কি চলে? যদি বলি
টলটলে ঠাণ্ডা জলে নিজের ধূসর তেষ্টা মেটাবার সময় কেবলি
আমার পড়েছে মনে লবণাক্ত ধু ধু উপকূল
এলাকার মর্মমূল-
ছেঁড়া পিপাসার কথা তবে
মিথ্যে বলা হবে?

এই যে রয়েছো প’ড়ে ঝড়ে-ওপড়ানো
গাছের মতোই কিংবা স্ফীতকায়, সম্বিত-হারানো
জলদেবতার মতো, কী তোমার নাম? অসিমদ্দী, আকমল
অথবা গজনফর আলী, নাকি যোগেশ মণ্ডল?
না যা-ই হোক, কী-বা আসে যায়, মৃত্যু কোনোদিন
করে না বিচার ধর্মগোত্র, ক্ষমাহীন
হাতে ছিঁড়ে নেয় অকস্মাৎ
প্রাণের গোলাপ কুঁড়ি। দ্বীপ দীপান্তরে কী ব্যাপক অপঘাত।

যখন প্রকৃতি রুদ্র দেবতার মতো ফেটে পড়ে
ক্রোধে ঘরে ঘরে
ওঠে রোল মরণ কান্নার আর এক লহমায়
জলের অক্ষরে লেখা কবিতার মতো মুছে যায়
অসহায় অসংখ্য জীবন, কিন্তু কী লাভ বলো না দোষ দিয়ে নির্বিকার
প্রকৃতিকে, যখন মানুষই আজ মানুষের সহজ শিকার।

তোমার হৃদয় আজ ফ্রিজে রাখা ফল,
অথচ তোমার ছিল ভালোবাসা, পথের সম্বল
যৎসামান্য, ছিল কিছু গৃহকাতরতা,
আর কিছু বলবার কথা
ছিল প্রিয় বন্ধুকে তোমার। কিন্তু মুখ
থুবড়ে রয়েছো প’ড়ে কী স্বচ্ছ জলের নিচে সব ভুলচুক
অথবা অসুখ ভুলে গিয়ে, জলময় এমন নিঃসঙ্গতায়
আমার চোখের পানি ঝরে অবিরল, মিশে যায়।

পেলে ঠাঁই সাপ্তাহিক টাইমের রঙিন প্রচ্ছদে, আচানক
পেয়েছো সম্মান প্রায় রাষ্ট্রপ্রধানের। অনেকেই খুব শক
পেয়ে থাকবেন গুম হয়ে কিছুক্ষণ
উত্তরে দক্ষিণে, তারপর যথারীতি দেবেন সহজে মন
নিজ নিজ খুঁটিনাটি কাজে।
শুধু মাঝে মাঝে
চলবে ড্রইংরুমে, সম্মেলনে আলোচনা বিরান চরের।
ঘুরবে তোমার এই সুদাসলে-খাটা লাশ বিশ্বময় ঢের
দামী মানুষের হাতে হাতে, ঘরে, ঘরে,
ভাগ্যিস মৃত্যুর সঙ্গে উড়ে গিয়েছিলে ঘূর্ণিঝড়ে।