ভয়ে-ভয়ে থাকি

আজকাল বড় বেশি ভয়ে-ভয়ে থাকি দিনরাত।
বয়স বেড়েছে বলে এই ভয় আমাকে কেবলি
তাড়িয়ে বেড়ায় না কি কুকুরের মতো? যে আমাকে
ভালোবাসে তার অভয়ের মুদ্রা ঈষৎ সান্ত্বনা।

ভয়ে-ভয়ে থাকি, যদি সহসা বধির হয়ে যাই,
তবে আমি শুনব না কুহুধ্বনি, মোৎসার্ট এবং বিটোভেন,
রবীন্দ্রনাথের গান, লালনের গীত, শিশুদের কলরব,
সবচেয়ে বেশি ভয়, শুনতে পাবো না তার সুমধুর কথা।

আমার দু’হাত যদি অকস্মাৎ ভীষণ অসাড়
হয়ে যায়, তবে আমি ছুঁতে পারব না গোলাপ কি
স্বর্ণচাঁপা, পারব না লিখতে কবিতা, ভয় পাই;
সবচেয়ে বেশি ভয়, পারব না করতে তাকে দৃঢ় আলিঙ্গন।

ভয়ে-ভয়ে থাকি, অসুস্থতাহেতু হঠাৎ আমার
পদদ্বয় যদি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়, তবে সকালের রোদে,
গোধূলিবেলায় আকাশের নিচে হেঁটে যেতে ব্যর্থ হবো;
পারব না যেতে গুলবাগে, সবচেয়ে বেশি ভয়,
কখনো হবে না গাওয়া গুনগুনিয়ে, কবিতার পংক্তি
সৃষ্টির মাদকতায় আর তার উজ্জ্বল নিবাসে।

ভয়ে-ভয়ে থাকি, যদি জিহ্বা, ওষ্ঠ আমার নিঃসাড়
হয়ে পড়ে কোনোদিন, তাহলে খাদ্যের, পানীয়ের
কোনো স্বাদ আমি নিতে পারব না; সবচেয়ে বেশি
ভয়, তার মুখ চুম্বনের ক্ষণগুলো লুপ্ত হবে চিরতরে।
ভয়ে-ভয়ে থাকি নিত্য, আমার দু’চোখে যদি জ্যোতি
কখনো হারিয়ে ফেলে, তবে বই কিংবা চিঠিপত্র
পারব না পড়তে কিছুই। দৃশ্যাবলি মুছে যাবে
দৃষ্টি থেকে; সবচেয়ে বেশি ভয়, তাকে আর দেখতে পাবো না।

১৫.১২.৯৪