ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য নিয়ে

পুলকিত বেড়ালের ঘাড়ের রোঁয়ার মতো মেঘ
আকাশকে আদর করছে দেখে আমার ঘরের
জানালাটা কেমন মদির চোখ দিয়ে
অনুরাগ পৌঁছে দিতে চায়
পাশের গাছের মর্মমূলে। অকস্মাৎ গাছটির
অস্তিত্বে মধুর আলোড়ন
এবং নিবিড় জাগরণ শূন্যতার
স্তব্ধতায় একরাশ ফুলের সুরের, কোকিলের
তানের সংগত। জানালাটা যেন ওর
বিবর্ণ প্রবীণ সত্তা ভুলে স্বপ্নাবেশে ভেসে যায়।

জানালার কাণ্ড দেখে অবাক হইনি মোটে, শুধু
চেয়ে থাকি আকাশপাতাল ভেবে ভেবে
গাছটির যৌবনের প্রেমময় রাগিনীর মতো
সংহত উচ্ছাস লক্ষ করি, হৃদয়ের
অনেক গভীরে ভেসে ওঠে একটি ময়ূরপঙ্খী নাও,
কয়েকটি অনিন্দ্যসুন্দর মাছ, কামিনীর হাতে
প্রস্ফুটিত অজস্র গোলাপ, তিনজন
কোকিল কাউকে ডেকে আনার তাগিদে
ক্রমাগত সুর হয়ে প্রবল নাচিয়ে তোলে ময়ূরপাঙ্খীর
ইতিহাসটিকে, আমি সেই ইতিহাসে
কী করে যে মিশে যাই, হয়ে উঠি অন্য কেউ দূর
অতিদূর কোনও এক আলাদা কালের।

এ আমি কোথায়, হায় কোথায় এলাম? অতিদূর
হলেও সুদূর নয়। খরাপীড়িত চৌচির ধুধু মাটি, যেন
একফোঁটা পানিও পায়নি বহুকাল। কোথাও কোথাও তার
প্রখর হলুদ ঘাস জেগে আছে ফাল্গুনের আগুনের মতো।
হলুদ ঘাসের অন্তরাল ভেদ করে
অজস্র কঙ্কাল জেগে আছে অনন্য উৎসবে এক, সবদিকে
অদৃশ্য হরফে যেন আছে লেখা বসন্ত-উৎসব। অগণিত
কঙ্কাল জাগ্রত খুব, করোটির চক্ষুহীন চক্ষু নিয়ে,
তাদের অত্যন্ত ঋজু শুকনো খটখটে হাড়ে আছে
অবিশ্বাস্য শস্যরাশি স্বপ্নের ধরনে আর মুঠোর ভেতর
বাংলার বসন্ত ঋতু দোলে ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যে এবং
দুলতে থাকবে ইতিহাসে নব্য ফাল্গুনের দীর্ঘ প্রতীক্ষায়।

৩.৪.২০০০