ডিসেম্বর ১৯৭১

ডিসেম্বর ৪ (শনিবার)
কাল রাত পৌনে ৩টায় প্রথম বিমান আক্রমণ শুরু হল। মুক্তি বাহিনীরই হােক কিংবা ভারতীয়ই হোক, ঢাকার বুকে বিমান আক্রমণ এতদিন পৌঁছে গেল। লােকজনের মৃত্যু বা তেমন কোনাে ক্ষয়ক্ষতির কথা শোনা গেল না। কিন্তু আতঙ্ক উৎকণ্ঠায় লােকজন অস্থির। কত সর্বনাশের পর এ উৎকণ্ঠা আবার কত দিন ধরে চলবে কে জানে। দিনের পর দিন জীবন থেকে মুছে যাচ্ছে। মন-জীবন-দিনক্ষণ বিরস বিবর্ণ বিস্বাদ।

ডিসেম্বর ৬ (সোমবার)
আজ ১১ টায় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বাধীন গণতন্ত্রী বাংলাদেশ বলে স্বীকৃতি দান করলেন। বাংলার এক একমুঠো মাটি রক্তসিক্ত শহীদের খণ্ড হৃৎপিণ্ড। জানিনা আজকের শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর এ স্বীকৃতির মর্যাদা বাংলার মানুষেরা সঠিকভাবে নিয়ে সত্যই গণতন্ত্রী এক মহান বাংলাদেশকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে রাখার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করবে কিনা। সন্দেহ, শঙ্কা সবই আছে। আমার যাদুধনদের বুকের রক্তে রাঙা এ মাটি। বড় পবিত্র। আল্লাহ এর মর্যাদা রক্ষা করুন। বিমান আক্রমণ চলছে। পাকিস্তানী একটি বিমান উড়তে দেখা গেল না।

ডিসেম্বর ৮ (বুধবার)
আজকের দৈনিক পাকিস্তানের খবরে বলা হয়েছে, গত সােমবার রাতে বেগম তাইফুর ঢাকায় ইন্তেকাল করেছেন। কোনো খবর বা আসা যাওয়ার কোনাে উপায় নেই। সাইরেন অথবা সাইরেন ছাড়াও তেজগাঁওয়ের দিকে বিমান হামলা চলছে। এতদিন একটি ইতিহাস-এর অবসান হল। বেগম তাইফুর, সারা তাইফুর সে যুগের মহিলাদের মধ্যে প্রগতিশীল এবং শিক্ষিতা সমাজকর্মী বলে পরিচিতা ছিলেন। জেল পরিদর্শিকা হিসাবে সুনাম অর্জন করেছেন, কাইজার-ই-হিন্দ পদক সমাজ সেবার জন্য লাভ করেছিলেন। তার লেখা স্বর্গের জ্যোতি, মহানবীর জীবনী সুপাঠ্য। ৯০ বছর বয়সের অভিজ্ঞতাসহ তিনি জান্নাতবাসিনী হলেন। একটি শতাব্দীর অবসান হলাে।

ডিসেম্বর ১২ (রবিবার)
রাত ১০টা। গতকাল বেলা ৩টা থেকে ঢাকায় কারফিউ দেওয়া হয়েছে, আজ পর্যন্ত চলেছে। আজ ৩ দিন ৩ রাত শামীম বাড়ীতে আসতে পারেনি। আজ রয়াল এয়ারফোর্স এসে ঢাকাস্থ বিদেশী দূতাবাস কর্মচারী পরিবার ঢাকা থেকে নিয়ে গেল। প্লেন থেকে গোলাবর্ষণ, তথাকথিত ভারতীয় গােলাবর্ষণ হচ্ছে মাঝে মাঝে। ঢাকার বাড়ীঘর অধিকাংশ শূন্য। ভয়াবহ নীরবতা আতঙ্ক আশঙ্কায় মানুষ শ্বাস রােধকারী আবহাওয়ার মধ্যে দিনরাত কাটাচ্ছে। আমার ভয় নেই শঙ্কা নেই। আল্লাহ আছে। চাটগাঁ বিচ্ছিন্ন কোথাও থেকে কারুর কোনাে খবর পাচ্ছি না। ফোনও মৃত।

ডিসেম্বর ১৪ (মঙ্গলবার)
মুক্তিবাহিনী ঢাকার কাছে এসেছে। আজ ৩ দিন থেকে ঢাকায় কারফিউ, হাট বাজার বন্ধ। আজ পানিও নেই। নিষ্প্রদীপ ত আছেই। আশা করছি রাত যত গভীর হচ্ছে, ভোরের আলো ততই এগিয়ে আসছে। জয় হােক সর্বহারাদের। যুদ্ধ বিরতির আলােচনা শুরু হয়েছে। শ্রীমতী গান্ধীর বাংলাদেশ স্বীকৃতি দানের পর শত্রু পক্ষের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়েছে। ইন্দিরা গান্ধী জিন্দাবাদ। মায়ের দুধ খেয়েছিল। ও সুকন্যা। আজ আশায় গৌরব বুক ভরে উঠছে, সব হারিয়েও বাংলা দেশের স্বাধীনতা অনেক বড়। আল্লাহ যেন এ আশায় বাধ না সাধেন। ওগো অকরুণ দাতা। অনেক দিয়েছ, অনেক নিয়েছ। বাংলাদেশের আজাদী দাও এবার।

ডিসেম্বর ১৫ (বুধবার)
আজ ৬ মাস হল, আমার পাখিরা আমার কোলছাড়া। আল্লাহ, নেগাহবানী করছেন। সর্ব দুঃখের দাহন নিয়ে আজও আল্লাহর কাছেই আবার মাথা নোয়াই। ফিরে আসুক বাংলার বুকে শান্তি। আসুক ফিরে মুজিব। আসুক যার যার বুকের ধনেরা আজও বেঁচে আছে তারা মায়ের কোলে। আমার বাছারাও যেন ফিরে আসে। জোর দিতে ভারত যুদ্ধ বিরতির আদেশ দিচ্ছে। সন্ধ্যা ৫টা থেকে আগামীকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সময় নির্ধারিত হয়েছে। সোভিয়েত থেকে জোর হুমকি চলছে, আল্লাহ যেন এবার রহমত করেন।

ডিসেম্বর ১৬ (বৃহস্পতিবার)
আজ ১২টায় বাংলাদেশ যুদ্ধ বিরতির পর মুক্তিফৌজ ঢাকার পথে পথে এসে আবার সােচ্চার হল ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণে। আল্লাহর কাছে শােকর। বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে। সুখ দুঃখের অনুভূতি কমে গেছে যেন, তবুও একি শিহরণ। আল্লাহ! তোমার দানের অন্ত নেই। ইন্দিরা গান্ধী শতায়ু হােন। শতবার কৃতজ্ঞতা জানিয়েও তার ঋণ শােধ হবে না। জয়যুক্ত হােক সােভিয়েত রিপাবলিক। আমার বাবা আমার কাহ্হার আজ বেঁচে নেই। আজ ২৯ দিন হল, সে শুয়ে আছে মাটির কোলে। আর আজ কি শােকাবহ ঘটনা। জয় মিছিল দেখতে গিয়ে হাতেম আলীর শালীর মেয়ে জলির বড়বােন ডলি ১৮ নং রাস্তায় গিয়ে মিলিটারীর উন্মত্ততার দরুন গুলিতে মারা গেল। আহা! মা বেঁচে আছে যে। এ যে কি করুণ দৃশ্য।

ডিসেম্বর ১৭ (শুক্রবার)
আজ আমার বাবার মৃত্যুর একমাস পূর্ণ হল। বাবারে, বাবা! আর তুই ফিরে আসবি না। ফিরে এল আজ মুক্তি বাহিনীতে যারা বেঁচে আছে, বাবুল, শাহাদাত, নাসিম, খােকন, আরও অনেকে, আল্লাহ বাঁচালেন সবাইকে- এও শােকর। আজ আবার ৩টায় বােরহান এসে নিয়ে গেল শহীদ মিনারে। নাগরিক সমিতিতে ভাষণ দিতে, গেলাম। কি বল্লাম মনে নেই। দেখলাম, মেয়েরা, বােনেরা, মায়েরা, ভাইয়েরা অনেকে এসেছেন, অনেকে আজ আসেনি, অনেকে আর কোনো দিনই আসবেন না। তবু বাংলাদেশ স্বাধীন। বদর বাহিনীর চোরামার, পশ্চিমা সৈনিকদের চোরামার খেতে খেতে যে এখনও রক্তে বাংলাদেশ সিক্ত হচ্ছে, এর শেষ কবে হবে।

ডিসেম্বর ১৮ (শনিবার)
ভয়ানক, বীভৎস ভয়ঙ্কর শত্রুরা বাংলাদেশকে শােকাকুল, শােকাতুর, আতঙ্কিত, শঙ্কিত করে বদর বাহিনী হাজার হাজার লােককে এখন হত্যা করে চলছে। মুনির চৌধুরী, রফিক, গিয়াস, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ডা. রাব্বি, ডা. আজাদসহ আরও অনেক মহিলাসহ ২৪০ জনের দেহ এখন পাওয়া গেছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে কারফিউ নিয়ে দিয়ে জালেম হারামজাদারা এই কাণ্ড করেছে। আল্লাহ। তুমি কি এখনও কিছু করবে না? শেষ হবে না তোমার রক্ত পিপাসার? শহীদুল্লা কায়সার, সিরাজউদ্দীন হােসেনও নাকি নেই। একি শুনছি দেখছি?

ডিসেম্বর ১৯ (রবিবার)
নাগরিক কমিটির সভা হল আমাদের বাড়িতে। বােরহান আহ্বায়ক, ড. কুদরাত-এ-খুদা সভাপতি, তিনি আজ আসেন নি। অন্যান্য মেম্বার এসেছিলেন। অনুসন্ধান করতে হবে কে কোথায় গুপ্তভাবে কাজ করেছে। মৃত্যুর সংখ্যারও শেষ নেই, মুক্তি ফৌজ-এর নিরস্ত্রীকরণের কথা হয়েছিল। পূর্বাণী হোটেলে রুহুল কুদ্দুস সাহেবের কাছে তা বন্ধ করার জন্য যেতে হল। তিনি সেখানে না থাকায় সেক্রেটারিয়েট গেলাম বােরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর ও আমি। কথা হল। নওয়াব, ইনাম, মােকাম্মেল সবার সাথে দেখা হল। চাটগাঁর খবরও কিছু পেলাম। আল্লাহ জানেন বদর বাহিনী আরও কি করবে।

ডিসেম্বর ২০ (সোমবার)
মুক্তিফৌজেরা দলে দলে এসে দেখা করে গেল। কালরাতে হালাই সাহেবের বাড়ীতে বিহারী হানাদার এসেছিল। আজ ২টা লাশ লেক-এর পাড়ে পাওয়া গেল। বেলা ১টায় একটা ফোন এল। এরিয়া ম্যানেজার ফার্মগেট থেকে ফোন করে উর্দুতে কথা বল্ল, আমার কাছে আসবে ৪ জন, বল্লো কামুফ্লেজে আসবে। কথার ধরন, হাসি ব্যঙ্গপূর্ণ মনে হল। কি জানি সত্যি ওরা ইন্ডিয়ান আর্মি, না পাঞ্জাবী পাক সেনা বুঝলাম না। তাই আজ মুক্তিবাহিনী পাহারা দিচ্ছে। মরবার ভয় করি না। অপমান থেকে আল্লাহ যেন রক্ষা করেন।

ডিসেম্বর ২১ (মঙ্গলবার)
আজ টুলুটার জন্ম দিন। আল্লাহ সৌভাগ্যবতী করুন। ইজ্জত বজায় রেখে মানে সম্মানে যেন দীর্ঘায়ু হয়। কবে চোখে দেখব কে জানে। কত যে আশা ভরসা শেষ হয়ে গেল।

ডিসেম্বর ২৩ (বৃহস্পতিবার)
১৯৬৯ সনের পর আজ আবার টেলিভিশন অফিসে গেলাম। কি বল্লাম, মনে নেই। বুক, মাথা যেন খালি শূন্য, আমার বাংলার সুসন্তান শিক্ষিত, অভিজ্ঞ ওরা আজ নেই। আমি ওদের মতো করে কি আজকাল কথা বলতে পারি। ওরা থাকলে কি আনন্দে হর্ষে পরিপূর্ণতায় এদিনটি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠত। আল্লাহ! কেন কেড়ে নিলে?

ডিসেম্বর ২৪ (রবিবার)
রাত ১০টায় আজ টুলু সোনা কলকাতা থেকে কান্নাভরা কণ্ঠে কথা কইল। লুলু, জাকিয়া বাইরে গেছে, ও কার ওখান থেকে কথা বল্ল, কানে শুনলাম। চোখে কবে দেখব কি জানি।

ডিসেম্বর ২৬ (রোববার)
চাটগাঁয় ফোন করলাম। আমার বাবার আজ ৪০ দিন পূর্ণ হল। ওর এতিম বাচ্চারা শাহ গরিবুল্লাহর মাজারে বাপের সমাধি জেয়ারত করে এল। আর দােলন, আমার প্রথম সন্তান আজ বিধবা। আমি মুক্ত বাংলাদেশ এর বুকে সভা সমিতি করে বেড়াচ্ছি। দিল্লী থেকে সাংবাদিক ভট্টাচার্য সাক্ষাৎকার নিয়ে গেলেন। মিরপুরে ভাইয়াকে খাবার সামগ্রী পৌছেঁ দিয়ে এলাম। কি দুর্ভাগা ভাইটা আমার, হাতের গ্রাসও যেন মুখে তুলতে দেয় না আল্লাহ। একি অভিশাপ। বুকের যন্ত্রণা আর কমে না। কোনাে কিছুই আমার সম্পূর্ণ হয়ে আমাকে নিশ্চিন্ততা দেয় না। আজ হক কলকাতা গেল।

ডিসেম্বর ২৭ (সোমবার)
আওয়ামী লীগ অফিসে মহিলাদের শহীদ শােকসভা থেকে এলাম। কি সভার ছিরি। মাঠে ময়দানে দেশের সব মহিলাদের নিয়ে এ শােক বা স্মৃতিসভা করা উচিত ছিল। আজ বাবুল বাকু কলকাতা গেল। হেঁটে। কি পাগলগুলাে সব। সবাইকে নিয়ে ৩ তারিখে ফিরবে বল্ল। দেখা যাক। গতকাল থেকে ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন ঢাকা-কলকাতা চালু হল। দেখলাম আরও কি যে দেখব, সব যেন মঙ্গলময় শুভ সুন্দর শান্তিময় হয় এই আল্লাহর কাছে বলি। জাস্টিস নুরুল ইসলাম বাচ্চুকে এ্যারেষ্ট করা হয়েছে। জাহানারা আরজুর স্বামী, ওতো লােক ভালাে বলে জানাতাম।

ডিসেম্বর ২৮ (মঙ্গলবার)
আজ সকালে আকাশবাণীর প্রতিনিধি দ্বীপেশ ভৌমিক, যুগান্তরের সহ সম্পাদক এসে দেখা করে গেলেন। সাক্ষাৎকারের কথা টেপ করে নিলেন ও শ্রীমতী গান্ধীকে উদ্দেশ করে আমার কবিতাটি লিখে নিলেন, বেতার জগতে ছাপাবেন বলে। নতুন গুড়ের পায়েসটুকু খুশী হয়ে খেলেন। জাহানারা আরজু এসে কেঁদে গেল, বাচ্চুকে ধরে নিয়েছে। কি করব আমি। বিকালে লিনু বেলালের সাথে শহীদুল্লার বাড়ী গেলাম, পান্নাকে দেখলাম। কি বলবার আছে। কি করবার আছে। ২টি বাচ্চা, বৃদ্ধা মা, আল্লাহ! তুমি এত নিষ্ঠুর কেন? আমি আর পারি না। যেন লোলন টোলন, জাকু মিনু কবে আসবে? এখন বড় দেখতে ইচ্ছে করে ওদের। আজ আবার ইয়াকেভ নাম নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফোন করল। ইংরেজীতে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বল্ল। আমি ইংরেজী জানি না বলায় খুব ঠাট্টা করে ফোন ছাড়ল।

ডিসেম্বর ২৯ (বুধবার)
আমার ‘দুলু’র মুখ দেখি আজ বাংলার ঘরে ঘরে
শ্বেতবাসা, আর শূন্য দু’হাত নয়নে অশ্রু ঝরে
বুকে করে সন্তানে
যাপিছে দিবস রাত্রি, কি করে সে কথা ওরাই জানে।
দেউটি নিভেছে, নীড় হারা পাখি, পক্ষী মাতার মতো
দু’বাহু প্রসারি আগলিতে চাহে দামাল দুলালে যত,
ওরা তা মানে না, বক্ষে ওদের জ্বলিছে ক্ষুদ্ধানল
পিতৃহারা যে করেছে মােদেরে কোথা সে দানব দল,
একবার দেখি! গােপনে যে ভীরু সরীসৃপ সম এসে
লক্ষ প্রাণেরে ছোবল মারিয়া বিবরে লুকাল শেষে
একটি ছোবল বিনিময়ে চাহে শতেক আঘাত হানি
বিদারিয়া দিতে ক্রুর দানবের পাষাণ বক্ষ খানি
অশ্রু নিবারি রক্ত চক্ষু ওরা চাহে প্রতিশোধ
ওদের মনের দাবাগ্নিজ্বালা কে করিবে প্রতিরোধ
অভাগিনী মাতা সকাতরে চাহে আবরি রাখিতে তারে
এখন গোপন শত্রুর দল হানা দিয়ে বারে বারে
পরাজিত-বিদ্বেষে
রক্তের স্রোত বহাইতে চাহে সোনার বাংলাদেশে।
ঘৃণ্য নির্লজ্জ অধম দানব নিস্ফল আক্রোশে
পথে বাহিরায় সারমেয় সম ক্ষুধিত উদরে এসে।
ঘৃণা ভরে কেহ মারে না ওদের, শহীদ শেণিতে পূত
এ মাটির প’রে যেন ওই পাপের রক্তের সোতাপ্লুত
বহে না, ঘৃণা কলুষ কালিমা লিপ্ত দানব দেহ
এ মাটিতে পড়ে কলুষিত করে চাহে না তা আর কেহ
তাই আজ মুছি অশ্রুর ধারা সন্তানহীন মাতা
জয়ে, গৌরবে প্রার্থনা করে ওগাে দাতা ওগো ত্রাতা
সুন্দর কর মহামহীয়ান কর এ বাংলাদেশ
এই মুছিলাম অশ্রুর ধারা দুঃখের হউক শেষ।

ডিসেম্বর ৩১ (শুক্রবার)
আজ সকালে কলকাতা হিন্দী পত্রিকার সম্পাদক বিষ্ণু কান্ত শাস্ত্রী ও দিল্লীর সাংবাদিক রঘু বীর সহায় এক সাক্ষাৎকারে এসেছিলেন, অনেকক্ষণ ধরে আলাপ আলোচনা করলেন, ছবি তুললেন, কয়েকটি কবিতাও নিয়ে গেলেন। এর মধ্যে ডক ও খুকু এল মিনুর সুটকেস নিয়ে, ওরা আজ বিকালে আসবে বলে। কিন্তু সারাদিন ধরে অপেক্ষা করলাম ওরা এল না। সন্ধ্যায়ও আশা করেছিলাম, ওরা এল না। বছর আজ শেষ, কি যে যন্ত্রণা বুকের মধ্যে।

৩ টায় বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির সভায় ২১ নং পুরানা পল্টনে গেলাম। মনি সিং ও অন্যান্য কমরেডের সাথে দেখা হল। আমাকে কিছু বলতে হল, বল্লাম, কি বল্লাম জানি না। ১৯৭১ আজ শেষ হয়ে গেল, জানি না, আগামী কালের দিন কিভাবে শুরু হবে।