পত্র – ৪১

10 Rawdon Street

Park Street P.O.

Culcutta-16

৩০/১০/৪৬

ভূপেন,

দারোয়ানজীকে ধন্যবাদ-ধন্যবাদ-ধন্যবাদ পোস্ট অফিসের কর্তৃপক্ষ আর পিওনকে। তোর ১লা তারিখের চিঠি আজ ৩রা তারিখে পেলাম।

কলকাতা কি স্বাভাবিক হচ্ছে?

অসুখের মধ্যে চিঠি পেতে ও চিঠি লিখতে ভালই লাগে। যদিও আমার এখন একশ’র ওপর জ্বর তবুও বেশ উপভোগ্য লাগছে এই শুয়ে শুয়ে চিঠি লেখা।

তুই যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসিস নি এতে আমি খুশীই হয়েছি। আমি যখন তোকে চিঠিটা পাঠাই তখনো কলকাতার অবস্থা এত সাংঘাতিক হয় নি; খবরের কাগজও বন্ধ হয়ে যায় নি এমন অতর্কিতে।

আমি তোকে ডেকেছিলাম শুধুমাত্র তোর সান্নিধ্য পেতে নয় সদ্যমুক্ত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের বীর কালী চক্রবর্তীর সঙ্গে তোর আলাপ করিয়ে দেবার জন্যে। শিশুর মতো সরল ঐ লোকটির সঙ্গে পরিচয় তোর পক্ষে আনন্দের হ’ত। আমার সঙ্গে তো এঁর রীতিমত বন্ধুত্বই হয়ে গেছে। বাস্তবিক এইসব বীরদের প্রায় প্রত্যেকেই শিশুর মতো হাসি-খুশি, সরল, আমোদপ্রিয়। এ ছাড়াও বিখ্যাত শ্রমিক এবং কৃষক নেতারা এখানে এখন অসুস্থ অবস্থায় জড়ো হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেও তোর আলাপ করিয়ে দেবার লোভ আমার ছিল। যাই হোক, কলকাতা সুস্থ না হলে আর তোর দেখা পেতে চাই না। ইতিমধ্যে হয়তো আমিই হঠাৎ একদিন ছাড়া পাবার পর তোদের ওখানে গিয়ে হাজির হব। কিছুই বলা যায় না।

বেশ কাটছে এখানে। সবাই এখানে আপন হয়ে উঠছে, ভালবাসতে আরম্ভ করেছে আমাকে। ডাক্তার রোগী সবারই আনন্দ আমার সঙ্গে রসিকতায়! এক এক সময় মনে হয় বেশ আছি- শহরের রক্তাক্ত কোলাহলের বাইরে এই নির্জন, শ্যামল ছোট্ট একটু দ্বীপের মতো জায়গায় বেশ আছি। কিন্তু তবুও আমার শিকড় গজিয়ে উঠতে পারে নি, বাইরের জগতের রূপ-রস-গন্ধ-সমৃদ্ধ হাতছানি সকাল সন্ধ্যায় ঝলক দিয়ে ওঠে তলোয়ারের মতো। এখন আছি বদ্ধ-দীঘির জগতে; সেখান থেকে লাফ দিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে মাছের মতো, কর্মচাঞ্চল্যময় পৃথিবীর স্রোতে। সকালের আশ্চর্য অদ্ভুদ রোদ্দুর কোনো কোনো দিন সারাদিন ধরে কেবলই মন্ত্রণা দেয় বেরিয়ে পড়তে; শহর-বন্দর ছাড়িয়ে অনেক দূরের গ্রামাঞ্চলের সবুজে মুখ লুকোতে দেয় অযাচিত পরামর্শ। সত্যিই অসহ্য লাগে কলকাতাকে মনের এইসব মুহূর্তে।

উপন্যসের ব্যাপারে তোর দুঃসাহসিক ধৈর্য আমাকে সত্যিই অনুপ্রাণিত করল।

পূজোয় কোথায় কোথায় লিখেছি জানতে চেয়েছিস? একমাত্র পূজোসংখ্যার ‘স্বাধীনতা’ ও ‘পরিচয়’ এবং কিশোরদের বার্ষিকী ‘শতাব্দীর’ লেখা’য় লেখা বেরিয়েছে জানি। তা ছাড়া এইসব কাগজ ও সংকলনে লেখা বেরুনোর কথা বেরিয়েছে জানি। তা ছাড়া এইসব কাগজ ও সংকলনে লেখা বেরুনোর কথা আছে: (১) শারদীয়া বসুমতী (২) শারদীয়া আজকাল (৩) উজ্জয়িনী- সংকলন (৪) মেঘনা-সংকলন (৫) ক্রান্তি-সংকলন (৬) বিমলাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সস্পাদিত একটি সংকলন ও (৭) পূজোর ‘রংমশাল’।

তুই কেমন আছিস কোনো চিঠিতেই তা জানাস না, তাই আর ও প্রশ্নটা করলুম না। তোদের এবারে পূজো কি রকম জমলো লিখিস। খোকন৫৬ এ রকম চুপচাপ কেন? আমার মামার পদ থেকে তো তাকে পদচ্যুত করা হয় নি। বিজয়ার শুভেচ্ছা ও ভালবাসাসহ।

-সুকান্ত