পত্র – ৪৪

কলকাতা
এবারকার বসন্তের প্রথম দিন
মঙ্গলবার ১৩৫১

মেজ বৌদি,
চিঠিখানা পেয়েই মেজদা ও নতেদাকে যা যা কহতব্য ছিল বলেছি। কিন্তু একটা ব্যাপারে আমাকে হাসতে হয়েছে- সেটা কাশী থেকে ফেরার জন্যে সংকোচ দেখে। আমার আর নতেদার নির্জনতা-প্রীতির গঙ্গাজল কখনো অপবিত্র হতে পারে না। আর, আমরা নির্জনতাপ্রিয় একথা সম্পূর্ণ মিথ্যে। সাময়িকভাবে নির্জনতা ভাল লাগলে যে চিরকালই ভাল লাগবে এমন কথা আমরা বলি না। নতেদা যে নির্জনতাপ্রিয় নয়, অধুনা নতেদার প্রাত্যিহিক সান্ধ্য-বৈঠকগুলোই তার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ। আর আমি কবি বলে নির্জনতাপ্রিয় হব, আমি কি সেই ধরনের কবি? আমি যে জনতার কবি হতে চাই, জনতা বাদ দিলে আমার চলবে কি করে? তা ছাড়া কবির চেয়ে বড় কথা আমি কমিউনিস্ট, কমিউনিস্টদের কাজ-কারবার সব জনতা নিয়েই। সুতরাং সংকোচের বিহ্বলতা নিজের অপমান। সংকোচ কাটিয়ে ওঠার জন্যে নেমন্ত্রনের লাল চিঠি পাঠিয়ে দিলাম।

আমার কিছু নেবার আছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে জানাচ্ছি আমি একটি পোড়ামুখ বাঁদর চাই। কেননা ঐ জিনিসটার প্রাচুর্য কাশীতে এখনো যথেষ্ট। তা ছাড়া, স্মৃতি হিসাবে জীবন্ত থাকবে। আর আমার সঙ্গেও মিলবে ভাল।

এদিকে মেজদার চেষ্টায় বাড়ি বদল হচ্ছে। এই পরিবর্তন খুব সময়োপযোগী হয় নি, এইটুকু বলতে পারি। আশা করি শ্বেত-স্নাত নতুন বাড়ি প্রত্যেকের কাছেই ভাল লাগবে।

শুনলাম আসন্ন বিচ্ছেদের ভয়ে কাশীস্থ সবাই নাকি ম্রিয়মান? হওয়া অনুচিত নয় এইটুকু বেশ বুঝতে পারি।

আজকাল ভালই আছি বলা উচিত, কিন্তু একেবারে ভাল থাকা আমাকে মানায় না। তাই ঘাড়ের ওপর উদগত একটা বিষফোড়ায় কষ্ট পাচ্ছি। পড়াশুনায় হঠাৎ কয়েক দিন হল ভয়ানক ফাঁকি দিতে শুরু করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফাঁকিবাজ হিসাবে নাম ক্রয় করেছি। পড়াশুনা করে না হোক না করে যে ফার্স্ট হয়েছি এইটাই আমার গর্বের বিষয় হয়েছে।

অস্তি বারাণসি নগরে সব ভাল তো? এখানকার সবাই, বিশেষ করে মেজদা ডবল মামলার মামলেট খাওয়া সত্ত্বেও শরীরে ও মেজাজে বেশ শরিফ। বিপক্ষের বেহুদার সুযোগ নিয়ে তাদের লবেজান করা হবে, একেবারে জেরবার না হওয়া পর্যন্ত সবাই নাছোড়বান্দা সকলের কাছে তাদের খিল্লাৎ খুলে ভবিষ্যতের খিল বন্ধ করে দেওয়া হবেই।

ফ্যা-পকাইকে৫৭ আমার শুভেচ্ছা ও তদীয় জনক-জননীকে চিঠিতে ভ’রে প্রণাম পাঠিয়ে দিলাম। সাবধান হারায় না যেন। আর জুজুল, টুটুল, গোবিন্দ৫৮ (মার৫৯) বাহিনীর জন্যে তো দোরগোড়ায় ভালবাসার কামান পেতে রেখেইছি; তারা একবার এলে হয়।

কাশীতে চালান করা এই আমার বোধহয় শেষ চিঠি। সুতরাং একটা দীর্ঘ ইতি।

অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জ্ঞাপনান্তে
স্নেহানুগত
সুকান্ত

(৫৭, পূর্বোল্লিখিত শ্রীরমেন ভট্টাচার্যের দিদি শ্রীমতি বিমলা দেবীর দুই কন্যা। সুকান্ত কাশীতে এঁদের বাড়িতে ছিলেন। ৫৮, ভ্রাতুষ্পত্রী শ্রীমতী মালবিকা ও পত্রলেখা এবং ভ্রাতুষ্পুত্র শ্রীউদয়ন ভট্টাচার্য। ৫৯, জেঠাইমা।)