পত্র – ৭

অরুণ,

প্রথমে বিজয়ার সম্ভাষণ জানিয়ে রাখছি। এরপর একে একে প্রতি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। প্রথমে কথা হচ্ছে জীবু ‘কবিতা’ শেষ পর্যন্ত দিল না- চেয়েছিলাম, তা সত্ত্বেও। তবে আগের ক’খানা রেখে দিয়েছি, সামনের সপ্তাহ থেকে সেগুলি ক্রমান্বয়ে পাঠাবার সঙ্কল্প রইল। আর পেনুর ওখানে গেলাম না নিজের নিতান্ত অনিচ্ছায়, বইখানা ওর অজ্ঞাতসারে ওকে দান করলুম, তুই বরঞ্চ ওকে আর একখানা চিঠি ডাক মারফৎ পাঠাস। সুভাষের কাছে যাই-যাই করে যাওয়া হয় নি, তবে যাবার ইচ্ছা আছে। এখানে সপ্তমীর দিন সারাদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর রাত্রে ভয়াবহ ঝড় সমস্ত কলকাতায় অল্পবিস্তর ক্ষতচিহ্ন রেখে গিয়েছিল। কাল শ্যামবাজারে গিয়ে প্রভূত আনন্দ পেলুম ওদের উচ্ছল সাহচর্যে-শিল্পী সুধাংশু চৌধুরীর সঙ্গে কোলাকুলি কালকের দিনের স্মরণীয় ঘটনা। আজ দুপুরে আমাদের উপন্যাসখানা১২ শ্যামবাজারে নিয়ে গিয়েছিলুম-তোর অংশটুকুর ওরা খুব প্রশংসা করল, আমি এখনো হাত দিই নি, এর পরের পরিচ্ছেদ লিখছে ঘেলু। তোর ঘরটায় আজকাল আমাদের অফিস বসেছে। আচ্ছা তোর সেই মেয়েটিকে মনে আছে, আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীলা? সহসা শ্যামবাজারে তাঁর সঙ্গে দেখা, আমার কাছে রবীন্দ্রনাথের একটি বই ছিল, সেটি দিয়ে লাভ করলুম।

মোবাতির আলোর মতো তাঁর স্নিগ্ধ ব্যবহার। তোর শরীর ভালো আছে জেনে নিশ্চিন্ত হলুম, ফিরছিস কবে? ভাইবোনেরা ভাল আছে? বাবা-মাকে আমার বিজয়ার সশ্রদ্ধ নমস্কার জানাস- তাঁরা বোধ করি ভালো আছেন? আমার বই বেরোচ্ছে, তবে নতেদা-রা১৩ দার্জিলিং থেকে না-এলে নয়।

-সুকান্ত। রাত ১০-১০

২০ শে অক্টোবর ১৯৪২