কার দোষ

এক রাজা তাঁর বাড়ির পাশে একটা প্রকাণ্ড উচু দেয়াল তুলবার হুকুম দিলেন। দেয়ালটি কিন্তু শেষ হওয়ামাত্র হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। রাজা তো রেগেই অস্থির! তখনই হুকুম দিলেন, “বেঁধে আনো রাজমিস্ত্রিকে! এখনই তাকে আচ্ছা করে ঠ্যাঙা দেওয়া হোক আর কয়েদ করা হোক।

রাজমিস্ত্রিকে ধরে আনা হতেই সে বলল, “মহারাজ! আমার কি দোষ? সুরকির মসলা খারাপ ছিল, আমি কি করব?”

তখনই লোক গিয়ে সুরকিওয়ালাকে ধরে নিয়ে এল। সে বলল, “দোহাই হুজুর! আমার কোন দোষ নেই। আমি তো মসলা ঠিক করে মেশাতে, কত চেষ্টা করলাম, কিন্তু মেশাবার পাত্রটা এমন বিশ্রী করে বানিয়েছে কুমোরে, যে, সেটা দিয়ে কিছুতেই ভালো করে মেশানো যায় না।”

অমনি আবার লোক ছটলো কুমোরকে ধরে আনতে। কুমোর এসে কেঁদে বলল, “মহারাজ, আমার কি দোষ? একে তো তাড়াতাড়ি মসলার গামলা গড়তে দেওয়া হয়েছিল, তার ওপর আবার গড়বার সময়ে- একটি মেয়ে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ছুটে যেতে-যেতে আমাকে এমনি চমকে দিল, যে পাত্রটার গড়নই খারাপ হয়ে গেল।”

মেয়েটিকে তখনই রাজার লোকেরা গিয়ে ধরে নিয়ে এলো। সে বলল, “মহারাজ! আমার কোনই দোষ নেই! ও বাড়ির সামনে দিয়ে যাবারও আমার কোন দরকার ছিল না। একজন স্যাকরাকে আমার কানের দুল গড়তে দিয়েছিলাম। বাড়িতে এসে দুলজোড়া দিয়ে যাবার কথা ছিল তার। কিন্তু সেদিন আমার চলে যাবার কথা; তবুও কিছুতে সে দুল দিল না দেখে আমাকে তার বাড়িতে ছুটে যেতে হয়েছিল। কুমোরকে চমকে দেবার কোন উদ্দেশ্যই ছিল না আমার।”

রাজার হুকুমে স্যাকরাকে ধরে আনা হল। সে বলল, “মহারাজ, আমার কি দোষ বলুন? মুক্তোওয়ালা মুক্তো দিয়ে যায় নি সময় মতো- সেজন্যই তো আমার দুল গড়তে দেরি হল।”

মুক্তোওয়ালাকে ধরে আনা হল; সে বলল, “মহারাজ! আমি তো মুক্তো পাবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ডুবরিতে ভালো মুক্তো তোলে নি, তার আর আমি কি করতে পারি বলুন?”

তখন ডুবরিকে ডাকা হল। সে এসে বলল, “মহারাজ! আমার দোষ এর মধ্যে কি হল বলুন? শুক্তিতে যদি ভালো মুক্তো না জন্মায় তো আমি আর কোত্থেকে আনি?”

তখন সকলে মাথা চুলকোতে আরম্ভ করল। শুক্তি তো সমুদ্রের তলায়! কাজেই শেষ পর্যন্ত আর কাউকে শাস্তি দেওয়াই হল না!

সন্দেশ-১৩২৮