কিম্ভূত

বিদঘুটে জানোয়ার কিমাকার কিম্ভূত,
সারাদিন ধ’রে তার শুনি শুধু খুঁতখুঁত।
মাঠপারে ঘাটপারে কেঁদে মরে খালি সে,
ঘ্যান্ ঘ্যান্‌ আব্‌দারে ঘন ঘন নালিশে।
এটা চাই সেটা চাই কত তার বায়না-
কি যে চায় তাও ছাই বোঝা কিছু যায় না।
কোকিলের মতো তার কণ্ঠেতে সুর চাই,
গলা শুনে আপনার বলে, ‘উঁহুঁ, দূর ছাই!’
আকাশেতে উড়ে যেতে পাখিদের মানা নেই,
তাই দেখে মরে কেঁদে- তার কোন ডানা নেই!
হাতিটার কী বাহার দাঁতে আর শুণ্ডে-
ও-রকম জুড়ে তার দিতে হবে মুণ্ডে!
ক্যাঙ্গারুর লাফ দেখে ভারি তার হিংসে-
ঠ্যাং চাই আজ থেকে ঢ্যাংঢেঙে চিম্‌সে!
সিংহের কেশরের মতো তার তেজ কই?
পিছে খাসা গোসাপের খাঁজকাটা লেজ কই?
একলা সে সব হ’লে মেটে তার প্যাখ্না;
যারে পায় তারে বলে, “মোর দশা দেখ্ না!”

কেদেঁ কেদেঁ শেষটায়- আষাঢ়ের বাইশে-
হ’ল বিনা চেষ্টায় চেয়েছে যা তাই সে।
ভুলে গিয়ে কাঁদাকাটি আহ্লাদে আবেশে
চুপি চুপি একলাটি ব’সে ব’সে ভাবে সে-
লাফ দিয়ে হুশ্ করে হাতি কভু নাচে কি?
কলাগাছ খেলে পরে ক্যাঙ্গারুটা বাঁচে কি?
ভোঁতামুখে কুহুডাক শুনে লোকে ক’বে কী?
এই দেহে শুঁড়ো নাক খাপছাড়া হবে কি?
‘বুড়ো হাতি ওড়ে’ ব’লে কেউ যদি গালি দেয়?
কান টেনে ল্যাজ্‌ ম’লে ‘দুয়ো’ ব’লে তালি দেয়?
কেউ যদি তেড়েমেড়ে বলে তার সামনেই-
‘কোথাকার তুই কেরে, নাম নেই ধাম নেই?’
জবাব কি দেবে ছাই, আছে কিছু বল্‌বার?
কাচুঁমাচু ব’সে তাই, মনে শুধু তোল্‌পাড়-
‘নই ঘোড়া, নই হাতি, নই সাপ বিচ্ছু,
মৌমাছি প্রজাপতি নই আমি কিচ্ছু।
মাছ ব্যাঙ গাছপাতা জলমাটি ঢেউ নই,
নই জুতা নই ছাতা, আমি তবে কেউ নই!’