ভীষ্ম

কুরুকুলে পিতামহ ভীষ্মমহাশয়
ভুবন বিজয়ী বীর শুন পরিচয়-
শান্তনু রাজার পুত্র নাম সত্যব্রত
জগতে সার্থক নাম সত্যে অনুরত।
স্বয়ং জননী গঙ্গা বর দিল তাঁরে
নিজ ইচ্ছা বিনা বীর না মরে সংসারে।
বুদ্ধিভ্রংশ ঘটে যায় শান্তনু রাজার
বিবাহের লাগি বুড়া করে আবদার
মৎস্য রাজকন্যা আছে নামে সত্যবতী
তারে দেখি শান্তনুর লুপ্ত হল মতি।
মৎস্যরাজ কহে, রাজা, কর অবধান-
‘কিসের অশিায় কহ করি কন্যাদান?
‘সত্যব্রত জ্যেষ্ঠ সেই রাজ্য অধিকারী,
‘আমার নাতিরা হবে তার আজ্ঞাকারী,
‘রাজমাতা কভু নাহি হবে সত্যবতী,
‘তেঁই এ বিবাহ-কথা অনুচিত অতি।’
ভগ্ন মনে হস্তিনায় ফিরিল শান্তনু
অনাহারে অনিদ্রায় জীর্ণ তার তনু।
মন্ত্রিমুখে সত্যব্রত শুনি সব কথা
মৎস্যরাজপুরে গিয়া কহিল বারতা-

‘রাজ্যে মম সাধ নাহি, করি অঙ্গীকার
‘জন্মিলে তোমার নাতি রাজ্য হবে তার
রাজা কহে, সাধু তুমি, সত্য তব বাণী,
তোমার সন্তান হতে তবু ভয় মানি।
‘কে জানে ভবিষ্যকথা দৈবগতিধারা-
‘প্রতিবাদী হয় যদি রাজ্যলাভে তারা?’
সত্যব্রত কহে, ‘শুন প্রতিজ্ঞা অমার,
‘বংশ না রহিবে মম পৃথিবী মাঝার।
সাক্ষী রহ চন্দ্র সূর্য লোকে লোকান্তরে
‘এই জন্মে সত্যব্রত বিবাহ না করে।’
শুনিয়া অদ্ভুত বাণী ধন্য কহে লোকে
স্বর্গ হতে পুষ্পধারা ঝরিল পলকে।
সেই হতে সত্যব্রত খ্যাত চরাচরে
ভীষণ প্রতিজ্ঞাবলে ভীষ্ম নাম ধরে।
ঘুচিল সকল ব্যথা, অনিন্দিত চিতে
সত্যবতী রানী হয় হস্তিনাপুরীতে।
ক্রমে হলে বর্ষ গত শন্তিনুর ঘরে
জন্ম নিল নব শিশু, সবে সমাদরে।
রাখিল বিচিত্রবীর্য নামটি তাহার
শান্তনু মরিল তারে দিয়া রাজ্যভার।
অকালে বিচিত্রবীর্য মুদিলেন আঁখি
পাণ্ডু আর ধৃতরাষ্ট্র দুই পুত্র রাখি।