ধাত্রী

শিয়ালদার ফুটপাথে বসে আছেন আমার ধাইমা
দুটো হাত সামনে পেতে রাখা,
ঠোঁট নড়ে উঠছে মাঝে মাঝে
যে কেউ ভাববে দিনকানা এক হেঁজিপেজি বাহারে রিফিউজি বুড়ি।
আঁতুড় ঘরে আমার মুমূর্ষ মায়ের কোল থেকে উনি
একদিন আমাকে বুকে তুলে নিয়েছিলেন
এঁর ডাটো শরীরের স্তন্য পান করেছিলুম
প্রতিদিন শুষে নিয়েছি রক্ত
ধাইমা’র কুঁড়োর গন্ধ মাখা বুকে শুয়ে আমি
চিল-কান্না কেঁদেছি
রোদ্দুরে পা ছড়িয়ে বসে আমাকে তেল মাখাতে মাখাতে
কত আদিখ্যেতা করতেন
মা-মাসিদের কাছে পরে অনেকবার শুনেছি সেই গল্প-
আমার ভেদ-বমির সময় অমাবস্যার মধ্যরাত্রে স্নান করে
তুলে এনেছিলেন গন্ধবাদালির পাতা
সত্যপীরের দরগায় মানত করেছিলেন আমলকী।

প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে আমি সিকির বদলে
দশ নয়া খুঁজছিলাম
দিনকানা বুড়ি চাইছিল, দুটো পয়সা দে বাবা!
ধাইমা, তুমি প্রথম আমার চোখ ফাঁক করে দিয়েছিলে
গোলাপজল,
দেখিয়েছিলে পৃথিবী
ধাইমা, এ কোন্‌ পৃথিবী আমাকে দেখালে?
বুড়ি, সর্বনাশিনী, আমাকে কেন বাঁচিয়ে রেখেছিলি
এই অকল্পনীয় পৃথিবীতে
আমি আর কত কিছু হারাবো?