ধ্যানী

-সমস্ত পতন তুচ্ছ করে,
উঠে এসো!

-কোথায় তোমার হাত?
-নির্লজ্জ ভিখারী, তুমি এখনো শরীর চাও?
-এখনো কাটেনি নেশা
-চিবুকে চিমটি দিয়ে জাগাও নিজেকে
-তোমার চিবুকে? তবে চিমটি কেন
চুম্বনেই বেশি সুখ
কচি পেয়ারার মতো ঐ থুতনি
উপমাবিহনী ঠোঁট, শুধু আস্বাদের
যোগ্য

-এ সবই পুরোনো কথা
জেগে ওঠে,
শোনাও জ্যা-শব্দ এই ধরিত্রীকে

-এখনো কাটেনি নেশা
-গুহা ছেড়ে বাইরে এসো
ও তোমার যোগ্য জায়গা নয়
কঠিন পাথর, চামচিকের গন্ধ, অন্ধকার
-বড় বেশি অন্ধকার, ঠাণ্ডা, ভারী স্নিগ্ধ
-প্রমিথিউস কার ভাই?
-আমারই, যদিও বৈমাত্ৰেয়
-বাইরে এসো! কতদিন দেখিনি তোমাকে
-এ যেন প্রেমের ভাষা মনে হচ্ছে?
ফের নেশা জমে উঠবে
হাতটা বাড়িয়ে দাও
টেনে আনি তোমাকেও এই কালো
মোলায়েম, আঁধার শয্যায়
-প্ৰেম কি নেশার বস্তু? শুধু ঘাম?
-কি বললে? শুধু কাম!

মোটেই না!
ওষ্ঠের লাবণ্য স্পর্শ, সে কি কাম?
কোমর জড়িয়ে ধরে শরীরের গন্ধ নেওয়া
কিংবা যদি মিলনের নেশা জাগে
কী মধুর তীব্ৰ-খেলা
মিথ্যেবাদীরাই শুধু এর অন্য নাম দেয়
-শুধু খেলাতেই সব শেষ? আর কিছু
কাজ নেই?

-পূর্ববঙ্গে সব কাজকেই কাম বলে-
ওরা খুব দার্শনিক!

-আমি চলে যাই?
-যাও না! কে আটকাচ্ছে? বাইরে কত আলো
শিরীষের ডালপালা ছুঁয়ে আছে নম্র ভোরবেলা
সমাজতন্ত্রের ভাষ্য মুখে নিয়ে
পাখি উড়ে যায়
ধারাবর্ষণের মধ্যে হেঁটে যান মাদার টেরেসা
সমুজ্জল প্রাকৃতিক দৃশ্য যেন মানুষের ঘর
আমার তো ঈর্ষা নেই,
প্রকৃতির সঙ্গে আমি দ্বৈরথে নামি না।
-তুমি এর বাইরে থাকবে?
-ক্ষতি কি, দু’ একজন যদি থেকে যায় এ-রকম?
-এই নোংরা অন্ধকারে? গড়ানো গুহায়?
-আমার যে ধ্যান আজো শেষ হয়নি
ধ্যানী মাত্ৰই তো গুহাবাসী
তাই না?
-বলো তো কিসের ধ্যান
-সে বিষম গুহ্যতত্ত্ব
-আমাকেও বলবে না?
-একমাত্র তোমাকেই বলতে পারি
কেননা ধ্যানের লক্ষ্য তুমি!
-এ কেমন চাওয়া, যার শেষ লক্ষ্যে আত্মহত্যা?
এ কেমন বেঁচে থাকা, যার কেন্দ্ৰে
জীবনের বিমুখতা?
শরীর নীরব হয়, বাসনার ঘুম পায়
নদীও শুকিয়ে যায় এমন কি
-সবই তো বদলে যায়
-আর তুমি?
-কেন এত জ্ঞান দিচ্ছে? আসতে চাও এসো
কিংবা কেটে পড়ো
-আমি তো পতন চাইনি, আমি চাই,
তোমার উদ্ধার!
-অয়ি দয়াবতী, পৃথিবীতে আর কোনো আর্ত নেই?
করুণা-বিলাসী যদি হতে চাও
করুণা-ভিখারী তুমি ঢের পাবে
আমি বড় অহংকারী!
-কোথায় সে অহংকার? যা তোমাকে
উঠে দাঁড়াবার শক্তি দেবে?
যা তোমার স্বায়ুকে করবে তীক্ষ্ণ
কপাট ভাঙার আগে দীর্ঘশ্বাস ফুরোবে না
গ্রন্থের পিপাসা থেকে নদীর বাঁধের কাছে
মুক্তি দেবে জল
মানুষকে চিনে নেবে তোমার দর্পণে
-কি রকম চেনা চেনা কথাগুলো
কিছু দাড়িওয়ালা
মহাপুরুষের কারখানায়
হয় না এসব তৈরী?
রাখো!
যদি চাও, উপহার দাও ঐ পিঙ্গল শরীর
আমার বুকের কাছে পা ছড়িয়ে বসো-
শান্তি দাও! হে সুন্দর
মাধুর্যের ঝাপটা দাও, কানে কানে বলো
কোনো মর্মকথা
না হয়তো চলে যাও, কোনো খেদ নেই!
-যেতে হবে জানি! এখনো তোমার নেশা
সত্যিই যায়নি দেখছি।
এর পর তুমি…
-আরও পতনের দিকে যাবো। পুনরায়
ধ্যানে বসবো

-কার?
-কার আবার? তোমারই তো
-আমাকে বিদায় করে আমাকেই ধ্যান করবে?
-আমার ধ্যানের নেশা
আমি এই নিয়ে বেশ আছি!