দুটি মুখ

একজন দেখলো শুশুনিয়া পাহাড়ের গা দিয়ে গড়িয়ে পড়া চাঁপা রঙের বিকেল
অন্যজন বললো, এত নিরন্ন মানুষ, এত হাহাকার, তবু মানুষ পিকনিক করতে আসে?

একজন শুনলো লুণ্ঠিত স্বর্ণ সিংহাসন ফিরে পাওয়ার মতন যৌবনের জয়ধ্বনি
অন্যজন বললো, দুটো ভিখিরি বাচ্চার সামনে ওরা মুর্গীর মাংস চুষে চুষে খায় কী করে?

একজন দেখতে পেল ঘোড়সওয়ারের মতন আকাশ ভেদ করে ছুটে যাচ্ছে। এক ঝাঁক শঙ্খচিল
অন্যজন বললো, ওগুলো সব শকুন, এত শকুন, গ্রামের পর গ্রাম এখন গো-ভাগাড়

একজন দেখলো নন্দলাল বসুর ছবির মতন এক সাঁওতাল কিশোর, সঙ্গে মূর্তিমান আদরের মতন একটা ছাগলছানা
অন্যজন বললো, ভূমিদখলের ষড়যন্ত্রে আদিবাসী সরল মানুষেরা এখন শিকড়হীন ক্রীতদাস

একজন দেখলো পাখিরা ফিরে আসছে স্নেহ মমতার সংসারে, বাতাস বিলিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের গন্ধ
অন্যজন বললো, কাজহীন মজুরদের অসহায়তার সুযোেগ নিয়ে চোরাকারবারিরা উজাড় করে দিচ্ছে বনসম্পদ

একজন আপন মনে উচ্চারণ করলো, উদাসীন সৌন্দর্যময়ী এই পৃথিবী, মানুষ কেন মানুষকে আনন্দের ভাগ দেয় না?
অন্যজন ঘোষণা করলো, চতুর্দিকে জেগে উঠছে নিপীড়িতের দল, উঁচু হয়েছে মুষ্টিবদ্ধ হাত,
সমাজবদলের দিন আসন্ন!

তারপর পলায়নবাদীর মতন একজন একটা নিরালা গাছতলা খুঁজে নিয়ে শুয়ে রইলো চুপচাপ
অন্যজন জিপ গাড়ি চেপে চলে গেল ডাকবাংলোতে জেলা অফিসারদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে
বুকে-দাগা ইতিহাস নিয়ে দিগন্ত ঢেকে জেগে রইল শুশুনিয়া পাহাড়
নিঝুম নিরেট অন্ধকারে অস্তিত্ববিহীনভাবে ডুবে গেল গ্রামবাংলা…
আবার কি ওদের দু’জনের দেখা হবে কোনোদিন
হাতে হাত মিলিয়ে বুঝবে পরস্পরের সত্য
একসঙ্গে গিয়ে দাঁড়াবে মানুষের সামনে?