ফেরা

মেল ট্রেন থেকে নেমেই চাপলুম গড়বন্দীপুরের জন্য গরুর গাড়িতে
শির পড়েছে জাঁকিয়ে
আমার গাঁয়ে ঠাকুর্দার ব্যবহার করা শাল
সিগারেট ধরাতেই হঠাৎ মেজাজ খিঁচড়ে গেল, ড্যাম্প লাগা, ঠিক ধোঁয়া
বেরুচ্ছে না
কিন্তু আমার লাইটারটা বিদেশ থেকে এনে দিয়েছে এক বন্ধু
বাচ্চা গাড়য়ানটি বেশ হিন্দি সিনেমায় গান গায়, যদিও তার বাবা
জেল খাটছে অন্যের জমিতে ফসল কাটার দায়ে
এখন দু পাশে তুলোট কাগজের মতন শূন্য মাঠ, ব্যাঙের চামড়ার মতন
শূন্য ডোবা
সাইকেলে ট্রানজিস্টার রেডিও ঝুলিয়ে চলে গেল একজন
উল্টোদিক থেকে হেঁটে আসছে আর একজন, তার দাড়িতে কোনোদিন
ব্লেড-ক্ষুড়ের ছোঁয়া লাগেনি মনে হয়
বট-চারা ওঠা শিব মন্দিরে রুনূ রুনূ ঘণ্টা বাজছে, তা ঢেকে দিল
বিমানের মেঘমন্দ্র ধ্বনি
মুদিখানায় ঠোঙ্গা ছিঁড়ে খবরের কাগজ পড়ছেন নিরাপদ মাস্টার
অবিকল আমার বাবার পিসিমা যেন তিরিশ বছর পড়ে বেঁচে উঠে তুলসী
তলায় দেখাচ্ছেন প্রদীপ
ন্যাংটো একটা বাচ্চা ছেলে ধুলো মেখে খেলা করছে
ওকে দেখে সত্যেন দত্ত কবিতা লিখেছিলেন সত্তর বছর আগে
বৃষ্টির মতন নেমে আসছে অন্ধকার
শুধু জ্বলছে হিমঘরের আলো
ভাঙা সাঁকোটি খচর খচর শব্দে বলছে, এসো, এসো এসো
চতুর্দিকে অজস্র ঝিঁঝিঁর ডাক বলছে, এসো, এসো, এসো
বাজ পড়া শিমুল গাছটি এখনো বাড়িয়ে রয়েছে ভূতের মতন লম্বা
হাত।
আমি গড়বন্দীপুরে ফিরে আসছি
আমি মহাশূন্য থেকে ভেসে আসছি আবহমান কালের গড়বন্দীপুরে
আমার মাথার পিছনে বৃত্তের মতন ঘুরছে ঠাকুর্দার আমলের জোনাকি
মাসি-পিসিদের দীর্ঘশ্বাসের মতন উড়ছে বাতাস
মোমের আলো মিট মিট করে নিবে যাওয়ার উদ্যমে ব্যস্ত আমি
আসছি, আমি ফিরে আসছি,
আমার হাতে পারমাণবিক টর্চলাইট!