মানুষ

পার্কের রেলিং-এর পাশে ইঁটপাতা
অস্থায়ী উনুনে
গাঢ় হলুদ রঙের খিচুড়ি ফুটছে-
বাচ্চাটা খেলছে রাস্তায় ধুলোয়
মা আস্তাকুড় থেকে বেছে নিচ্ছে তরকারির খোসা
পুরুষটা শুয়ে শুয়ে দেখছে দুপুর-রোদের আকাশ
তার ঠোঁটে বার বার এসে বসছে মাছি
ভিখারী পরিবার- অন্যদিন ওদের দিকে চোখ পড়ে না
আজ ইঁটের উনুন ও খিচুড়ি দেখে পিকনিকের কথা
মনে পড়লো
ওরা কি সারাজীবনের জন্য পিকনিক করতে এসেছে?

মেয়েটি উঠে গেল বেহালার ট্রামে
ছেলেটি তারপর একা একা হাঁটতে লাগলো
দোহারা, শ্যামলা রং, কুড়ি-একুশ, মুখখানি ভারি বিষণ্ণ
ও অহঙ্কারী-
ও কেন বিষণ্ণ? ও কেন এই পরিব্যাপ্ত মেঘলা দুপুরে
দেখছে না এই ভুবনমোহিনী অচেনা আলো?
তবু ছেলেটির ওষ্ঠভঙ্গির অহঙ্কার দেখেই মনে হলো
ও একজন ছদ্মবেশী রাজকুমার
সদ্য মহিমাচুত, কিন্তু এই ছদ্মবেশ
তার নিজস্ব
মেয়েটিও কি রাজেন্দ্ৰাণী? ট্রামে উঠে গেল, ভালো করে
মুখ দেখিনি
মেঘলা দুপুরে ময়দানে একা একা হাঁটছে
আমার ছদ্মবেশী রাজকুমার।

বিকেল পাঁচটায় হাওড়া ব্রীজে কত সংখ্যক মানুষ
সবাই কেজো, ব্যস্ত, এ ওকে ঠেলছে, এ ওর
পা মাড়িয়ে দিচ্ছে
যেতে হবে, যেতে হবে, ঠিক সময়ে যেতে হবে!
কোথায় যাবে ওরা?
যে-যার লোকাল ট্রেনের সময় মেপে রেখেছে
চার্লি চ্যাপলিনের ছবির মতন হাস্যকর হুড়োহুড়ি
হঠাৎ বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে ছুটে আসে
পাগলা-হাওয়া
ফুলের বাজারে হুলুস্থুলু
জাহাজের মন-খারাপ ভোঁ জ্বেলে দেয় নগরীর আলো
হাওড়া ব্রীজের মানুষগুলো আমার কাছে
স্পষ্ট হয়ে ওঠে-
ওরা সবাই আসলে ব্যস্ত হয়ে খোঁজাখুঁজি করছে
কোথায় কোন কৌটোয় লুকোনো আছে
লোকশ্রুত ভ্রমর!