নির্মাণ খেলা- তিন

কাঁখে গাগরী, চলেছে নাগরী, সুঠাম তনুখানি
ছন্দ মিলে ঘেরা
[এরকম লাইন মনে এলেও তা নিয়ে কবিতা লেখা চলে না। কোমরের বদলে কাঁখের মতন আর্কেইক শব্দ কখনও কখনও ব্যবহার করতে ইচ্ছে হয় বটে, কিন্তু তার সঙ্গে ‘নাগরী’ ও ‘তনু’ যোগ করলে একেবারে বৈষ্ণব কবিতার ধাঁচ এসে যায়। কিছু কিছু বাংলা গানে তবু এখনও এ রকম চলে। আমি গান লিখি না।
কিন্তু ছবিটি? নারী শরীরের বর্ণনা প্রত্যেক পুরুষ কবির কলমে শিক্ষানবিশির পরীক্ষার মতো। সারা জীবন ধরেই এই শিক্ষানবিশি চলে। যারা ছবি আঁকে তাদের যেমন বহু ভঙ্গিমায় নগ্ন নারী শরীরের রেখাচিত্র রচনায় পারদর্শিতা আয়ত্ত করতে হয়। গোধুলিবেলায় নরম আলোয় একটি বা কয়েকটি রমণী কোমরে কলসি দুলিয়ে পুকুর থেকে জল আনতে যাচ্ছে, এই দৃশ্য চিরকালের। শুধু দেখার চোখ ও ভাষা বদলায়।]

কাঁখে সোনার কলস যায় নদীর কিনারে, দ্যাখো
কুচকুচে কালো এক রাধা
এত পাতলা শরীর যেন খায় না দুবেলা, তার
বিষের লতায় চুল বাঁধা

[পেতলের কলসি খুব ঝকঝকে করে মাজলে সোনার চেয়েও উজ্জ্বল হয়। আমরা কেউ সত্যিকারের সোনার কলস দেখিনি। সোনার কলস আবার অনেক সময় কোনও নারীর যৌবনের উপমা। কী করে বলো তো ভাঙলে তোমার সোনার কলসখানি? তা দিয়ে কোনো মেয়ে চুল বাঁধে কি না তা আমি জানি না। কিন্তু বিষের লতায় চুল বাঁধা এমন বিদ্যুৎ ঝলকের মতন এসে গেল যে বদলাবার প্রশ্নই ওঠে না। পাতলা শরীর না চিকন শরীর?]

আজ বাতাস উধাও আজ আকাশ কঠিন, আজ
মানুষের চোখে চোখে খরা
[এ কী, এ রকম তো লিখতে চাই নি। একটি রোগা গরিব, কালো কিশোরীর নদীতে জল সইতে যাওয়ার বর্ণনা শুরু করেছিলাম, তার মধ্যে খরা টরা এসে গেল কেন? কী ভাবেযে আসে কে জানে। এটাই তো কবিতায় ম্যাজিক। এর পর অবধারিত…]
আজ আকাশ উধাও, আজ আকাশ কঠিন, আজ
মানুষের চোখে চোখে খরা
ছেঁড়া শাড়িটি কখনো ছিল নীল বা নীলের মতো
এখন সকল রং হরা

দেখা যায় না কোমর, ওর বুকের আঁচলে ধুলো
মন ছাড়া হাঁটে পায় পায়
ঠোঁটে অতীব গোপন কথা কাকে সে
শোনাতে পারে?
নদী তাকে ডাকে আয় আয়
[নারীর বর্ণনা কিছুই হলো না। বাকি রয়ে গেল, পরবর্তী কিংবা তারও পরবর্তী কবিতার জন্য!]