স্বাধীনতার জন্য

স্বাধীনতা শব্দটি কৈশোরে বড় প্রিয়
ছিল যেন আবছা দিগন্তের ওপাশেই রয়েছে সেই
ভালোবাসার মতন শিহরনময়
এক গভীর প্রান্তর
বয়ঃসন্ধির মোড় পেরুলেই সেখানে পৌঁছে যাবো
সে কি অধীর প্রতীক্ষাময় রোমাঞ্চ ছিল তখন!

তারপর এলো সেই স্বর্ণময় দিন, এমন একটি
বিন্দুতে এসে দাঁড়ালুম
যার দু’ পাশ দিয়ে আকাশ বিভক্ত হয়ে গেছে
সূর্যের সোনালি রশ্মি আশীর্বাদ জানালো
বৃষ্টি দিল সব গ্লানি ধুইয়ে

সবাই বললো এই তো বেশ পবিত্র ও প্রস্তুত হয়েছো
এবারে কয়েদখানার মধ্যে সুড়সড় করে ঢুকে পড়ো!

বাইশ বছরে পা দেবার পর দু’দিকে দু’কান ধরে
টান মারলো
জীবিকা ও সামাজিকতা
পৃথিবীটাকে যে-রকম চেয়েছিলুম তার ওপরে শুধুই কুয়াশা
যেন সব কিছুই আছে, ছুঁতে পারছি না
চেয়েছিলাম মানুষের মুক্তি, কিন্তু আমার হাতে পড়ছে বন্ধন
দূরত্বের আড়াল থেকে কেউ যেন ডাকছে, বুঝতে পারছি না ভাষা
ছোট ছোট আরাম, টুকিটাকি মোহজালে জড়িয়ে দিয়েছে সর্বাঙ্গ
এ রকম কথা ছিল না, এ রকম তো কথা ছিল না!
ক্রমশ একটা বয়েসে পৌঁছে মনে হয়
সামনের দিকে আর কিছু আশা করবার নেই
তবু একটা জেদী অহংকার জেগে থাকে
কার জন্য আশা? শুধু তো আমার জন্য নয়,
যারা নতুন জন্মেছে তাদের জন্যও

কিন্তু বিষণ্ণতা ছুঁয়ে থাকে নিজস্ব দেয়াল
গাঢ় অভিমানে মাঝেমাঝেই গলা চুপসে আসে
চারপাশে শুনতে পাই, প্রকৃত স্বাধীনতা নয়
শুধু স্বাধীনতা শব্দটির দেহতত্ত্ব নিয়ে
চলেছে তুমুল কলরব

মাঝে মাঝে ছেঁড়ার চেষ্টা করে পালিয়েছি
পাহাড়ে, জঙ্গলে, আদিবাসীদের আস্তানায়
কিছু একটা ভাঙার অস্থিরতায় নিজেকেই ভাঙতে চেয়েছি
বারবার
প্রত্যেকবারই কেউ ঝুঁটি ধরে টেনে ফিরিয়ে এনেছে
ঘুমপাড়ানি গানে বুজে গেছে চোখ
জেগে উঠে বুঝেছি, ওসব দু’দিনের মৌখিক ছদ্মবেশ
বুক টনটন করে উঠেছে
মেনে নিতে চাইনি, মনে হয়েছে, আছে, আছে, পথ আছে!

পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে দেখি
স্বাধীনতার পোশাকপরা অস্ত্রধারীদের মহড়া
আমার মন খারাপ আমি কেমন করে বোঝাবো
তবে কি এ পৃথিবী পরিপূর্ণ ধ্বংসের পর
প্রকৃত স্বাধীন হবে?
আমি একজন কিশোরের দিকে তাকাই, সেও
স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায়নি তো?