শব্দ ১

তখন দরজায় স্পষ্ট শব্দ শোনা যায়, উদ্ভিদের পদশব্দ–
মাতৃজঠরের
ভিতরে শিশুর হাসি, সরল, অথবা দুই প্ৰতীক্ষিত ঘড়ি
দু’দিকে দেয়াল জোড়া বিপরীত আয়না থেকে বহু লক্ষ ঘরের ভিতরে
পরস্পর কথা বলে, এ ছাড়া সমস্ত দৃশ্য চুপ।

আমার মুখের মধ্যে জিভ নেই, দাঁত নেই, অধরোষ্ঠহীন, বারান্দায়
শার্ট প্যান্ট শুকোচ্ছে রোদে, গেঞ্জি উড়ে গেছে ডাস্টবিনে
ডাকবাক্সে চিঠি ছিল ভোরবেলা, খালি খামে ডাকটিকিট
ভিতরে শরীর নেই, হাস্যকর, শুয়ে আছে টেবিলে ধুলোয়-
এমনকি মেয়েরাও শব্দহীন, বুকের ভিতরে হাসি, কান্না-ক্ৰোধ
পোকার মতন
খেলা করছে, টেলিপ্রিন্টারের শব্দে ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট, মন্ত্রী, বন্যা
থেমে গেছে
ভগ্ন প্রেমিকের ছুরি ঝলসে উঠলে
প্রতি-নায়িকার কণ্ঠে আর্তনাদ নেই
শুধু আছে উদ্ভিদের পদশব্দ, অজাত শিশুর হাসি; এবং ঘড়ির গূঢ় আলোচনা,
দূরে ফুল ফোটার কলরব, জলাশয়ে মাছের চিৎকার।

জ্যোৎস্না নিবে গেলে তবু অন্ধকার নেই, আর শব্দ থেমে গেলে
তবু অমোঘ গোলমাল
জেগে থাকে, হৃৎপিণ্ড ছিন্ন করা ভালোবাসা ঘুমোতে পারে না
কবিতায়। স্বপ্নে, শোকে, কুমারী মেয়ের গন্ধে বিষন্ন বাতাস
চর্তুদিকে, সব মানুষের মুখ ভাঁটফুলের মতন অশ্লীল মনে হয় এক সময়,
আমার আত্মীয় কোনো ঘড়ি নেই, আয়না নেই, আমার জন্মের শব্দ-
প্রথম দিনের সেই প্রিয় শব্দ মনে আছে, কিংবা মনে নেই।