সরযূ নদীর তীরে গাঢ় সন্ধ্যাকালে
বাবরের সঙ্গে দেখা। তিনি হাঁটু গেড়ে
সোনালি উষ্ণীষ খুলে নামাজ আদায়ে
বসেছেন। আমি কোনও ধর্মেরই প্রকাশ্য
উদ্দীপনে অবিশ্বাসী। চুপ করে আছি
সম্রাট মেললেন চোখ, আমি করজোড়ে
নিবেদন করি তাঁকে, হে শাহেনশাহ
এই যে অযোধ্যা, আর রাম পরিবার
সত্য হোক বা না হোক, নেই ইতিহাসে
তবুও অজস্র লোক কল্পনায় মানে
এখানে কি মসজিদ না বানালেই নয়?
সম্রাট ঈষৎ হেসে অভয় দিলেন
ঠিক স্থলপদ্ম রং বামহাত তুলে
বললেন, ওরে বেটা, যতক্ষণ আমি
নামাজ পড়ছিলাম, তুই কি করছিলি?
পাশের মন্দিরে কেন পূজায় বসলি না?
মৃদু কণ্ঠে বলি তাঁকে, হে বাদশাহ, আমি
গোলামের চেয়ে দীন, গুস্তাকি মার্জনা
করবেন নিজ গুণে, তবু বলতে হবে
মানুষের পূজা কিংবা ধর্মচর্যা সব
আসলে তো অন্তরের। বাইরে দেখাবার
এমন কী প্রয়োজন? মঠ বা মসজিদে
আনাগোনা ব্যাপারটা কি ভড়ং না শুধু?
রামের মন্দিরটাও প্রয়োজনহীন
কোনও শাস্ত্রে মন্দিরের কথা কিচ্ছু নেই।
সম্রাট বাবর তাঁর নীল চক্ষে হেসে
চুপিচুপি বললেন, অচেনা কুমার
আমি এবংবিধ প্রশ্ন বড় ভালোবাসি
চক্ষু বুজে ভাবি আর মনে মনে বলি
মানুষ তো মানুষই, তবু ধর্মের বিভেদে
বিজয়ীর তলোয়ার ঝলসে ওঠে কেন?
ধর্ম কিংবা মনুষ্যত্ব, এই দোলাচলে
কাটিয়েছি বহুদিন, এইবার আমি
বুঝেছি এ সার সত্য, মন্দির-মসজিদ
অহং-এর খেলাঘর, ঐশ্বর্য-পুতুল
আল্লা মিঞা এসব কি গড়তে বলেছেন?
চেয়ে দ্যাখ নদীস্রোতে ভেসে যায় কাল
চন্দ্ৰপ্ৰভ আশমানে দীপ্ত নীরবতা
ওপারে অরণ্যময় সুঘ্রাণ বাতাস
চক্ষে কেন অশ্রু আসে, কেন কাঁপে বুক
সুন্দরের পীঠস্থান এই বসুন্ধরা
যারা কলুষিত করে, তারা কি জানে না
এ জীবন অসীমের একটি ফুৎকার!