স্মৃতির শহর ২৭

জোব চার্ণকের সমাধির ওপর ফুটেছে
এক থোকা কালকাসুন্দি ফুল
একটি সেপাই-বুলবুলি রং বদলাচ্ছে সেখানে বসে
মেঘশূন্য আকাশে ঝলসায় চিন্ময় রোদ্দুর
পাখিটি উড়ে যাবে, ফুল ঝরে পড়বে
ওরা ইতিহাসের ধার ধারে না
বাতাস তবু ঘুরে ঘুরে খবর রটায়, আছে, আছে, আছে!

চার্চ লেনের চার পাশ ঘিরে শোনা যায়
কোটি কোটি সোনা-রুপোর টুকরোর জলতরঙ্গ ধ্বনি
ভুল হিসেবের মহোৎসব ও হাস্য পরিহাস
এক কোণে শতাব্দীর ধুলোমাখা ধর্মাধিকরণ
তার খুব কাছেই এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের লম্বা লাইন
সেখানে দাঁড়িয়ে আছে হুবহু এক রকম
আত্মসমর্পণকালীন যোদ্ধা যেন সব
নিরস্ত্র, দণ্ডিতের মতন মুখ
আমি দেখতে পাই আমাকে, তীব্র অনুতপ্ত
জুতোর পেরেক বিঁধলে মনে পড়ে, এখনো বেঁচে আছি।

হঠকারী এক ছোকরা নবাবের অস্থায়ী আস্তানায়
এখন ছিঁচকে চোর ও বিবর্ণ-কোট উকিলেরা
কানামাছি খেলে প্রত্যেক দিন
যেন এই মুহূর্তটাই অনন্ত মুহূর্ত, নইলে
আর বেঁচে থাকার কোনো আশা নেই
তবু হঠাৎ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় অশথ গাছের নীচে
অশথ গাছ দীর্ঘজীবী, ওরা জানে
ওরা অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করেছে
বড় বড় দস্যু ও বড় বড় আইন ধন্ধবাজদের
ওরা পাড়ি দিতে দেখেছে দিল্লিতে
দুটি গাঙ্‌ শালিখ ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর ভূমিকা নেয়
পুরোনো কালের গল্পে ওরা ঠোঁটে ঠোঁট ঘষে
তারপর একটা শব্দ ফেলে রেখে
উড়ে যায় বিখ্যাত নদীর দিকে
এই ছোট-কারণাবলীর বিচারশালায়
একদিন আমরা অনেকে মিলে আওয়াজ তুলেছিলুম
এই আজাদী ঝুটো, ভুলো মাৎ, ভুলো মাৎ
সবাই কি তা ভুলে গেছে, এমনকি স্বাধীনতাও?

বাতাস তবু ঘুরে ঘুরে খবর রটায়, আছে, আছে, আছে
ওরে চঞ্চল, ওরে অবিশ্বাসী, কী আছে? কী আছে?
একটু স্পষ্ট করে বল
আমি ক্ষুধার্ত, আমি বড় স্মৃতি-কাতর
সোনার কৈশোর আর স্বেচ্ছা-কণ্টকময় যৌবন
আমি নিবেদন করেছি এখানে
এই অভিমানী, অভিশপ্ত ইট-কাঠের আত্মাকে
এর পথে পথে রয়েছে আমার অজস্র ব্যাকুল চুম্বন
তার আর কোনো প্রতিদান চাই না
শুধু বাঁচতে দাও, বেঁচে থাকো
শুধু বাঁচতে দাও, বেঁচে থাকো
শুধু বাঁচতে দাও, বেঁচে থাকো…।