পোশাক-কন্যা

থান-কাপড়ের মধ্যে তোমার বোঝাপড়া, মাপঝোপ
অর্থনীতির দুর্বোধ্য ঝোঁক নিত্যদিন
বুকের ছাতি আর ফিতার দীর্ঘ টানে
এগিয়ে চলেছো তুমি
ভোরের আগমনীর কিউ ধরে
জীবিকার অনিবার্য তাড়নায়
তোমার নির্ধারিত স্যুইং মেশিন নড়ে ওঠে
স্বল্প আয়ের শ্রম-বিনিয়োগ চুক্তিতে
তোমার প্রাত্যহিক জীবনের স্টিচিং মুদ্রার বিনিময়
যেন শীতের সান্ধ্য পুলওভার বোতামের চাঁদ
তুমি ফিরে আসছো, ফিরে যাচ্ছো
আকাশ আর মেঘের তোলপাড়ে
জীবন অমাবস্যার পর আরেকটি জীবন-সন্ধ্যায়
এ বোতামের চাঁদ তোমাকে দিচ্ছে
কিছু কৃত্রিম জ্যোৎস্নার বিবরণ
নাগরিক ফুটপাতে বায়ু-দূষণের পৃথিবী
সূর্য ওঠার আগে
এবং সূর্য ঘুমোবার পর
যূথবদ্ধ পদযাত্রা তোমার
সারিবদ্ধ যন্ত্রের সঙ্গে নিয়ত শব্দ-পীড়নের সহবাস
আবার ঘরবসতিতে রেখে আসা
শিশু-সন্তানের জ্বরঘোরের কান্নার শব্দ
যেন মেশিনেও শুনতে পাও, আঁৎকে ওঠো
অন্যমনস্ক সেলাই-ঢেউয়ের মাঝে
সন্তানের কান্নার শব্দে আঁকা-বাঁকা সেলাই হয়ে
ঢুকে পড়ো বাতিল পোশাকের স্তূপে,- গুরুদণ্ডাদেশে
অদৃষ্টের মোহন নির্মাণে
-হে পোশাক-কন্যা
তোমার শ্রমের অপ-অমরতা গণনা করে
কারা আমাদের উন্নয়ন-বিভোর এই দেশে
কারা ধরে রাখে পুঁজিবাদের লুকানো ছোবল
পোশাকের প্রতিটি সুগন্ধি-ভাঁজে
তোমার শ্রমের ঘামে ভেজা আমাদের সময়
অথচ অর্থহীন লিখে রাখে কারা
পোশাকের একটি নাম ‘রপ্তানিযোগ্য’ মনোহর মণ্ডল?