এই সংগ্রাম

এই সংগ্রাম দিন রাত্রির তীরে
চলে অবিরাম সারা মন ঘিরে ঘিরে।
প্রতি মুহূর্তে শ্বাপদ তুলিছে ফণা
হানি পরাজয়ী বিষাক্ত যন্ত্রণা,
ক্রূর হীনতার পিছল পথে সে
বিষাইছে রাত্রিরে।।

স্বপ্ন আমার দিন …

মানবতার সে কোহিতূর আজ
কতদূর? … কতদূর?
ব্যথিত আকাশে মোর পরাজিত সুর
অন্ধকারায় লীন …

মনের সকল পশুদল আজ
মাতাল- টেনেছে সুরা,

মধ্যদিনের আকাশ আমার
হ’য়েছে তন্দ্রাতুরা,
ঝিমন্ত; নির্জীব।
রণশ্রান্ত সে দেখে পূর্ণ পাশবিকতা,
মাথা কোটে তার অন্তিম ব্যর্থতা।

স্বপ্ন আমার দিন …
রাত্রির তীরে তবু তোলে সংগিন।

আরক্ত দল দিন কোথা পলে পলে
ফুটে ওঠে ক্রমাগত…
হানা দেয় তার প্রতি পাপড়িতে শবভুক দলে দলে,
তবু বিকশিত প্রতিমুহূর্ত বিজয়ের পথে চলে,
পাহাড়তলীর আকাশ গন্ধে ভরে
প্রথম প্রেমের মত।
মুক্ত দিনের অবকাশ ক্ষণতরে-
ফুল ফোটানোর একটি নিমেষে দাও মোরে অন্তত।

দিন রাত্রির এই সংগ্রাম, এই পরাজয় ভীতি,
এই পশ্চাৎ অপসরণের রীতি
থামুক নিমেষ লাগি…
মানুষের খর সূর্য দীপ্তি আবার উঠুক জাগি …
প্রগাঢ় রক্ত পাপড়ি খোলার মত
একটি নিমেষ দাও মোরে অন্তত।

ঘুণ ধরা এই মুর্দা দিলের মঞ্জিল কুরে কুরে
মারী কীট বাঁধে বাসা,
কোথা মানুষের দিগন্ত রেখা? দূর হ’তে আরো দূরে
পরাজয়ী সুর শুনিছে সর্বনাশা!
ধমনীতে আজ বহিছে পাশব ধারা
নিখিল চিত্ত ফিরিছে সর্বহারা।
অতল তিমির তলে সে রুগ্ন
তবু দেয় মাথা চাড়া …
স্বপ্ন সুদূর দিন …
শিশির ঝরানো রঙিন ফুলের রক্তিম শাখা নাড়া,
অজ্ঞাত এক আকাশ ভরানো জ্বলে ওঠে সব তারা
… স্বপ্ন বন্ধহীন …

তাই অবিরাম তার সংগ্রাম
শ্বাপদের দল মাঝে!
যদিও মাটির ক্রন্দন সুর
আকাশে আকাশে বাজে,
শিরায় শিরায় বিষাক্ত যন্ত্রণা,
নিম্নাবর্তে অমোঘ আকর্ষণ,
সব আবরণ ছিঁড়ে ফেলে ওঠে মুক্তির ক্রন্দন;
নেশার আড়ালে কাঁটায়ে তবুও হ’ল সে অন্যমনা।

এই আকাশের মেঘাবরণের ফাঁকে
হাতছানি দিল তারা,
কোন দুর্গম তূর পাহাড়ের ডাকে
অসহন হ’ল কারা
হ’ল অসহন পশুদের কাছে জঘন্য পরাজয়;
শিলা দুর্গমে ওড়ে মানুষের আধো-চাঁদ অক্ষয়।

পাহাড় পথের সিড়ি বেয়ে বেয়ে উঠেছিল যারা আগে
তাদের গতির ঝড়ে আজো এই মরুতটে দোলা লাগে!
থেমে যায় যত পিশাচের কলরোল,
অবিশ্রান্ত সে গতির কল্লোল
শোনা যায় দূরে দূরে:
তারা চ’লে গেছে সব বাধা ঠেলে, পশুদের পিষে ফেলে
বন্ধুর কোহিনূরে …

রুগ্ন মনের আকাশ এখানে ছড়ায় মৃত্যু হাওয়া,
দূর পাহাড়ের যাত্রীদলের বোঝা হ’ল আরো ভারী,
শ্বাপদের মাঝে তবু তারা করে মানুষের সন্ধান,
পাশবিকতার শিরে হানে তরবারি।

যদিও শ্বাপদ তোলে বিষাক্ত ফণা,
যদিও এখানে অসহ্য হ’ল হীনতার যন্ত্রণা,

তবু বহুদূরে ডাক দিল আজ হেরার শিখরচূড়া
: ডেরার কপাট খোলো আজ বন্ধুরা,
পাশবিকতার ললাটে তীক্ষ্ণ তীর উদ্যত করো
এই সংগ্রাম … জেহাদে বৃহত্তর …

প্রগাঢ় রক্ত পাপড়ি খোলার মত
একটি নিমেষ দাও মোরে অন্তত।।