হায়াত দারাজ-স্বপ্নচারী সংবাদ

হায়াত দারাজ
বাঘের শ্যালিকা নয়, ব্যাঘ্ৰ কুলে জন্ম নয়; তবু
ভাগ্য বলে খালা আম্মা যাবতীয় ব্যাঘ্ৰশাবকের!

স্বপ্নচারী
কার কথা বলো তুমি হায়াত দারাজ?

হায়াত দারাজ
অতি তুচ্ছ পরপদলেহী এক মার্জারের কথা।

স্বপ্নচারী
তবে কেন
এ ভনিতা? বিড়ালের কোন কথা যদি জাগে মনে
নিতান্ত সহজভাবে, খোলাখুলি জানাতে পারো তা।

হায়াত দারাজ
জীবন যেখানে নয় সহজ, সাপের কুণ্ডলীতে
জীবন যেখানে বাঁকা;- সেখানে অথবা সে জমিনে
দাঁড়িয়ে সহজভাবে কথা বলা পণ্ডশ্রম শুধু।

স্বপ্নচারী
কিন্তু বিড়ালের কথা?

হায়াত দারাজ
অবান্তর নয় মোটে তাই
চাপা সে থাকে না আর। জানি সেই ধূর্ত ভিক্ষাজীবী
পোষমানা; রঙ্গমঞ্চে উঠে বৃথা কেশর ফোলায়;
যদিও কেশর নয় শীর্ণ স্কন্ধে কতিপয় রোঁয়া।

স্বপ্নচারী
কেন দাও মার্জারের অসঙ্গত তুলনা? আমি কি
শুনিনি প্রথম ভোরে নকীবের মুক্ত পদধ্বনি?
গোলামী জিঞ্জির ভেঙে আমি কি আনিনি আজাদীর
মুক্ত বহ্নি?

হায়াত দারাজ
লেজ নিয়ে আস্ফালন বাঘের মাসীর
সঙ্গে তুলনীয়।

স্বপ্নচারী
ব্যঙ্গোক্তি স্বভাব যার, বাঁকা চোখে
দেখে যে দুনিয়া, তাকে কিছু না বলাই ভালো; তবু
এই জীবনের সাথে বিড়ালের ভাগ্য তুলনায়
সঙ্গতি রয়েছে কী না;- চিন্তা করেছো কখনো?

হায়াত দারাজ
বিড়ালের ভাগ্যে বাঁচো, পুরাপুরি সে কথা বলি না;
বিশেষত সে মাটিতে- যার প্রতি পথ, ধূলিকণা
উজ্জ্বল রয়েছে আজও তাজা খুনে লক্ষ শহীদের;
যদি ভাগ্যে হয় কারু তবে তা তাদেরি। অকারণে
উত্তরাধিকার সূত্রে দাবী করো তুমি যে তাদের
সম্মান, তা শুধু আজ মাজারের আত্মপ্রবঞ্চনা।
ব্যাঘশাবকের নাম অরণ্যে থাকে না সংগোপন,
ব্যর্থ আস্ফালন শুধু আনে ক্লান্তি মার্জার জীবনে
সৃষ্টি করে রঙ্গমঞ্চে প্রহসন গতানুগতিক।

স্বপ্নচারী
মুক্ত মানুষের সাথে প্রতি পায়ে ভীরু মার্জারের
অহেতু তুলনা শুধু তোমার অশেষ প্রগল্ভতা।

হায়াত দারাজ
যদিও পেয়েছে কিছু শারীরিক উত্তরাধিকার
পূর্বপুরুষের, তবু দেখ চেয়ে সংকল্পের পথে
মুক্ত মানুষের চেয়ে মিল পাবে মার্জারের সাথে।

স্বপ্নচারী
তিক্ত অভিযোগে শুধু তিক্ততর প্রশ্ন টেনে আনে।

হায়াত দারাজ
ঘুম ভাঙলেও যারা পাশ ফিরে শোয় চোখ বুজে।
তাদের জাগানো বৃথা, যতবার তুমি ডাক দেবে
গভীর ঘুমের ছলে তত তারা শোবে পাশ ফিরে।
কাজেই সকল চেষ্টা ব্যর্থ সেই মগজের কাছে
যে দেয় প্রচুর মূল্য এই পার্শ্ব পরিবর্তনের।

স্বপ্নচারী
সোজাভাবে কথা বলা নাই কি তোমার অভিধানে?

হায়াত দারাজ
আত্মপ্রতারণা যদি খোঁজে রূপ দার্শনিকতার
অন্তত সেখানে জানি বক্রোক্তি হবে না অসঙ্গত,
কেননা ও দুষ্ট বুদ্ধি কোন দিন সহজ আঙুলে ওঠেনি,
খোলেনি তার ভারগ্রস্ত মুখোশ কখনো,
বরং খুঁজেছে ঢের সারল্যের আস্তরণ টেনে
কৌটিল্যের কূট নীতি আজাদীর ইজ্জৎ ছাড়িয়ে।

স্বপ্নচারী
আত্মপ্রতারণা কার কবে তুমি দেখেছো কোথায়,
কঠিন বক্রোক্তি শুধু ক’রে যাও আজ অকারণে।

হায়াত দারাজ
যে নিজের শুভ বুদ্ধি ক্রমাগত রাখে চাপা দিয়ে
বিতর্কের অন্তরালে দুষ্ট বুদ্ধি খেলা করে তার,
বোঝালে সহজভাবে বোঝে না সে সহজে; অথবা
যে ভাবে অন্যের মুখে নেশা করা চলে অল্প ব্যয়ে
যায় না বোঝানো তাকে ধূমপানে অভ্যস্ত যে নয়।

স্বপ্নচারী
আরো বলো স্পষ্টভাবে।

হায়াত দারাজ
আদর্শের কদৰ্থ তোমার
প্রতি কাজে।

স্বপ্নচারী
দায়ী তুমি প্রতি পদে করেছ আমাকে।
কিন্তু যে আদর্শ, বলো নিজ পায়ে পারে না দাঁড়াতে
কেন মরি অনর্থক আমি তার ভারবাহী হয়ে?

হায়াত দারাজ
আদর্শের অর্থ কেন খোঁজো শুধু পুঁথি ও কিতাবে?
আদর্শের প্রাণ বাঁচে সম্পূর্ণ বাস্তব রূপায়ণে
জীবনে, বিশ্বস্ত শ্রমে। সেই দাম দিয়েছ কখনো?
দুর্লভ স্বপ্নের মত হাতে এল আজাদীর ফল,
সুস্বাদু হয়নি কেন যদি আজ শুধাই সে কথা
প্রত্যুত্তর দেবে কোন কালো বাজারের মহাজন,
কোন স্বার্থান্বেষী নেতা, কোন ধূর্ত ইমাম অথবা
অকর্মণ্য কল্পনাবিলাসী তুমি; তুমি স্বপ্নচারী?
নিজের দায়িত্বভার ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত বিলাসে
কোন মার্জারের পন্থা খুঁজে ফেরো স্বপ্নমুগ্ধ মনে?

স্বপ্নচারী
গলগ্রহ মার্জারের অবান্তর প্রসঙ্গ এখানে
অসঙ্গত, অর্থহীন।

হায়াত দারাজ
অকস্মাৎ অপস্মার হ’লে
দিশাহারা চিন্তাজাল ছিঁড়ে যায় যেমন রোগীর
তোমার বিচ্ছিন্ন চিন্তা তেমনি বিকৃত। অনুকারী,
শক্তিহীন, চিহ্ন নাই কোনখানে স্বাবলম্বনের
স্বাধীন বাঘের নাম নাও কোন আত্মীয় সুবাদে?
অথচ এ কথা বলো কে না আর জানে পৃথিবীতে
পোষমানা বিড়ালের সঙ্গে তার প্রভেদ কতটা?
পরের উচ্ছিষ্ট খেয়ে কাটে দিন যে হীন প্রাণীর,
চৌর্য বৃত্তি পেশা যার, নেশা যার ভিক্ষায়; অপিচ
বাচনিক মুখরতা ছাড়ে না যে- সেই তো মার্জার।
তার সাথে কোন দিন চলে না বাঘের আলোচনা।
নিমেষে কাঁপায়ে বন সে মুক্ত প্রতীক আজাদীর
জ্বলন্ত শিখার মত সে জীবন্ত, নির্ভীক, বিশাল
আপনার বাহু বলে নেয় কেড়ে আপন শিকার,
কারো মুখ চায় না যে, করুণার প্রত্যাশী যে নয়
তার সাথে তুলনায় এই দীন মাজার জীবন
কত হাস্যকর।

স্বপ্নচারী
অদ্ভুত ঘোলাটে বলে মনে হয়
হায়াত দারাজ খান! তোমার নির্মম মুখরতা।

হায়াত দারাজ
আরো বেশী মনে হবে, নেমে যাও যদি আরো নিচে
প্রবৃত্তির। নিজের প্রবৃত্তি জালে নিজের সত্তাকে
বাধা দিয়ে ইচ্ছা-অন্ধ আদিগন্ত পৃথিবীর বুকে
আরো কর্মকুণ্ঠ হয়ে চাও যদি আজাদীর স্বাদ
বিস্বাদ ঘোলাটে বলে মনে হবে; মনে হবে আরো।।