হে আত্মবিস্মৃত সূর্য

শর্বরীর মেঘ স্তর অন্ধকারে ফেরে মত্ত দৈত্যের সমান
হে আত্মবিস্মৃত সূর্য! এখনো কি প্রভাতের হয়নি সময়?
এখনো কি সুষুপ্তির অন্তরালে টানি যবনিকা
হে মোর প্রভাত সূর্য! তমিস্রার খুঁজিবে আশ্রয়?
কত যুগান্তের বহ্নি বৃক্ষতলে হ’য়েছে সঞ্চিত,
আকাশে বাতাসে কত আর্তস্বর করে হাহাকার
হে সূর্য! বঞ্চিত সেই বিষতিক্ত প্রাণের প্রদাহ
এখনো কি হবে না প্রকাশ?
এখনো কি হয়নি সময়?

অসাম্যের ঘূর্ণাবর্তে যে লুষ্ঠিত জনতা এখনো
তোমাকে ফিরিছে খুঁজে ব্যাকুল শতাব্দী তীরে এসে
তোমার আলোক থেকে হে সূর্য! এখনো তারা রবে কি বঞ্চিত?
তোমার উদার দীপ্তি মুক্তি কি পাবে না আর এ অন্ধ নিশীথে?
দেখ লুব্ধ কারুণের লোভ-হিংস্ৰ দৃষ্টিতলে জনতা উন্মাদ,
দিশাহারা হয়ে ফেরে আঁধার জিন্দান থেকে অন্ধ মৃত্যুকূপে,
তিমির পিপাসু যত শবভুক পিশাচেরা করে আনাগোনা
অন্ধ ক্ষমতায় মত্ত ভাবে তারা প্রভাতের রুধিবে দুয়ার।

কত কাল স’য়ে যাবে এই অপমান?
আত্মঘাতী বঞ্চনার এই অভিশাপ,
এই অর্থহীন কুণ্ঠা দৌর্বল্যের এ ভীরু আড়াল,
কৃত্রিম কুয়াশা ঘেরা শতাব্দীর এই মধ্যক্ষণে
হে আত্মবিস্মৃত সূর্য! মেনে নেবে আর কতদিন?
পদানত জীবনের সীমারেখা দিগন্তে কি যায়নি মিলায়ে?
তবু কেন
তবু কেন দেখা যায় স্খলনের মসীকৃষ্ণ রেখা
কুঞ্চিত ললাটে তবু সংশয় ঘনায়মান!
কেন?
কেন নিশাচর হিংস্র পিশাচেরা করে আনাগোনা?
জীবনের এ ব্যর্থতা (জানি তুমি) পারো মুছে দিতে
পিশাচের জয়ধ্বনি নিমেষে আমারে দিতে পারো;
আকাশ জ্বালাতে পারো প্রলয়ের শিখা দিয়ে তুমি
পৃথিবী গড়িতে পারো মরণের উন্মত্ত পাথারে!
তবু কেন স’য়ে যাও নিয়মের এই ব্যাভিচার?

কত কাল আর স’য়ে যাবে?
হে আত্মবিস্মৃত সূর্য! সংগোপনে রবে কত কাল?