ঝিল্লী

নিবিড় নিথর রাত্রি, স্তব্ধতায় যে কলভাষণ-
তুমি তারি দূতী, তুমি ভর দিয়ে নিশীথ-পাখায়
শোনালে হারানো গান। মর্মরিত পাতার স্বপন
ধূলিতলে অবিশ্রাম দূর হতে দূরে কেঁদে যায়।
রাত্রিচর নভযাত্রী নীরব সঞ্চারে মেলে ডানা,
কৃষ্ণা আকাশের পথে জমে আছে স্তব্ধতা গভীর।
কলভাষ থামাও তোমার। কিছু হয় নাই জানা
তোমার অপরিচয়: অন্ধকার দীর্ঘ শতাব্দীর।
হাজার সূর্যের আলো যে গুণ্ঠন পারেনি খসাতে-
তোমার সুরের লাস্য তার পায়ে চপল মঞ্জীর।
কলভাষ থামাও তোমার, আজ এই দীর্ঘ স্তব্ধ রাতে
চেনা পৃথিবীতে চলে- সন্ধান অচেনা ধরিত্রীর।
এখনো নূপুর বাজে ঝিল্লীকণ্ঠে, ফেরে সে বাসাতে
যেথা নীড় বাঁধা আছে নবারুণ আলোকরশ্মির।
সারারাত ঝিল্লীর নূপুর বাজে ঝিমঝিম
আকাশের গায়ে শুধু ঘুম
নীরব নিঝুম।

ধান কাটা মাঠে
পড়ে আছে শস্যগন্ধী খড়,
এক মনে গণিছে প্রহর তারা
ধরণীর ঘুমের পাড়ায়
নীরব পাহারা।

ঝল্লি ডাকে অবিশ্রাম:
তুমি জাগো, তুমি স্তব্ধ হও
তুমি শুধু কথা পুঞ্জ শুধু শব্দ নও,
তুমি তারা, তুমি ঝিল্লীস্বর
শস্য সম্ভাবনা নিয়ে তোমার রজনী কাটে
ধূসর প্রান্তর।
বিদ্যুৎসংকুল পথে তুমি স্বাতীতারা-
প্রবল বাধার মুখে আবর্তমুখর গতিধারা
-তীর-তীব্র বেগ
জীবন মৃত্যুর দোলে সুতীব্র আবেগ।
তোমার চলার তালে প্রলয় সৃষ্টির বাজে সুর
ঝিম্ঝিম্ ঝিম্ঝিম্ কলোল্লাসে বাজিছে নূপুর
থামায়ে সকল কোলাহল।
তোমার ঘুমের কুঁড়ি পাপড়ি মেলিছে অবিরল
জীবন্ত উল্লাস রসে
পরম আশ্বাসে অচঞ্চল,
তোমার পথের ধারে অশ্রান্ত ডাকিছে ঝিল্লীদল।।