কাফেলা ও মন্‌জিল

এক
মঞ্জিলের বাঁশী বলে, ‘নীড় বাধো এখানে তোমার।’
কাফেলার ধ্বনি বলে, ‘নয় নয়, নয় আজো নয়।’
মঞ্জিলের বাঁশী বলে, ‘আনন্দের এসেছে সময়।’
কাফেলার ধ্বনি বলে, ‘র’য়েছে দুঃসহ গুরুভার,
নতুন মঞ্জিল পানে রেখায়িত, দিগন্ত যাত্রার
সংকেত র’য়েছে প’ড়ে। বাঁশী বলে, ‘ভোল সেই কথা,
অন্তহীন বালু পথে মনে করো সেই নিঃসঙ্গতা,
সেই অবিশ্রাম গতি, দুর্বহ পথের গুরুভার- ‘

কাফেলার ধ্বনি বলে, ‘জানি আমি, সেই তো আমার,
জীবনের অশেষ পাথেয়। প্রাণান্ত শ্রমের দিনে
বোঝার সে গুরুভার সেই তো চরম পুরস্কার।’
কাফেলার পদধ্বনি মুছে যায়, নামে অন্ধকার,
মুসাফির দল তবু চলে সেই দীর্ঘ পথ চিনে;
দিগন্তে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে ওঠে দৃষ্টি সেতারার।

দুই
সেই দুর্গম পাহাড় পথের ডাক
এখনো শুনতে পাই,
কাফেলা সালার! আজ মোর জনপদে
সাথী নাই; সাথী নাই!

শত দুর্গম পাহাড়ের চূড়া বেয়ে
তবু দেখি প্রাণপণে
কারা যেন চলে আয়োজন করি
নিভৃত নির্জনে।

অলস, উদার রাতের মুগ্ধ ক্ষণে
শুনেছি তো বহুবার
পাহাড় পথের ডাক বজ্রের মত
হানা দেয় বারবার।

আমরা তখন রঙিন নেশায় মেতে
সে ডাক এড়াতে চাই,
পাহাড় পথের যাত্রী একাকী চলে,
নাই তার সাথী নাই।

প্রমোদ-বিলাসী সমতল-চারী যারা
শুনতে চায় না পাহাড় পথের ডাক,
ঈগলের সাথী হয় না ঈগল ছাড়া
আস্তাকুঁড়ের ছলনাকুশল কাক।

তাই বিস্ময়ে দেখি সারা রাত ধ’রে
পাহাড় পথের যাত্রী একাকী চলে,
অন্ধকারের ব্যূহ ভেদ করি তার
সঙ্গীবিহীন মনের তারকা জ্বলে।
প্রমোদ-বিলাসী আমরা তখন নীচে
আস্তাকুঁড়ের আনন্দ গণি মিছে,
সরাইখানার দুয়ারে আঘাত হেনে
সারা রাত ফেরে পাহাড় পথের ডাক।