পথিক

হাজার জনতা যেথা পার হ’ল- চির যাত্রীদল
লক্ষ যুগ যুগান্তর ফোটায়েছে সেখানে কমল
কঙ্কালের শীর্ণ বুকে। বাদুড় মেলিয়া যায় পাখা।
সেখানে রজনী অন্ধ গাঢ়-কৃষ্ণ তমসায় ঢাকা।
শুধু অন্ধকারে ক্লিন্ন দেখা যায় সে পথের ধূলি
যে পথে চলিয়া গেছে মানুষের ছিন্ন দলগুলি।।

সে পথের ধূলি তুলে শুধানু তাদের ইতিহাস:
আনন্দ বেদনা আর ঘরভাঙা, ঘরের আশ্বাস;
সে পথের ধূলি নিয়ে অন্তরের বাতায়ন খুলি
ধূলিস্তূপ মাঝে আমি দেখিলাম হয়ে গেছি ধূলি!
দেখিলাম মরুপ্রান্তে চেঙ্গিসের করোটি-মিনার
আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে পরশিছে ধূলির কিনার,
দেখিলাম সমুদ্রের যাযাবর মিশেছে ধুলায়
সহস্র রজনী-কথা বাগদাদের ধুলি-জনতায়।।

মানুষের মনের গহনে দেখিলাম শুধু অশ্রুজল
মিলনে, বিরহে চির-শ্রাবণের ধারা অবিরল
ঝরিতেছে অন্তহীন কাল, নাই তার প্রদোষ সকাল;
যত ভুলে যাওয়া গান উঠায়েছে বেদনা আড়াল।।
চরম ব্যথার দিন হে পথিক! যদি ভুলে থাকো
স্বপ্নের রঙিন ক্ষণ কোনদিন তুমি ভুলো না কো।
ব্যথা-বারিধির বুকে সেই স্বপ্ন সে আশার দীপ
শূন্যতার মরুরাত্রে ধরিবে সে পথের প্রদীপ;
বধূ তব দীপশিখা পথ চাওয়া সোনার কমল
লক্ষ যুগ যুগান্তর যেথা প্রিয় মেলিয়াছে দল।।