শাহেরজাদী

রাত শেষ হয় কাহিনী তোমার অশেষ শাহেরজাদী!
পাতার আড়ালে জাফ্রানী রং; গোলাবের ফোটাদল,
সেতার বাজিছে কণ্ঠে তোমার রসায়িত উচ্ছল,
কখনো চটুল পুলকে হাসিয়া বেদনায় কভু কাঁদি;
রাত শেষ হয় কাহিনী তোমার অশেষ শাহেরজাদী।।
সুর চঞ্চল তোমার আঙুল আমি শুধু বাঁধা তার,
তোমার আঘাতে আমার ব্যথাতে হ’য়ে আসে একাকার,
জোছনা-জোয়ারে চাঁদের প্লাবন, ঢেউ ওঠে সেতারার;
চাঁদ হেসে যায় শুনিয়া তোমার কাহিনী এ লজ্জার।।

তুমি কথা কও আরো চুপি চুপি স’রে এসো আরো কাছে,
তোমার তপ্ত নিশ্বাসে মোর শিরায় রক্ত নাচে,
লীলা-রসে ভরা কামতনু তব মুছি কলঙ্ক কালি
রঙ্গীন হ’ল রক্ত প্রেমের ফোটা গোলাবের ডালি।
কখনো এসেছো আলিঙ্গনের আড়ালে ও বাহু বাঁধি?
রাত শেষ হয় কাহিনী তোমার অশেষ শাহেরজাদী।।

ঘুমে ঢুলে পড়ে বাদশা হারুন দুই চোখে ভরা নিঁদ,
দজলার জলে পেতেছে আকাশ ঘুম-প্রাসাদের ভিত,
জলপরীদের শত লাস্যের চটুলতা হ’ল শেষ,
রাজপ্রহরীর দুচোখে লেগেছে মোহন তন্দ্রাবেশ,
তুমি শুধু আসো আরো কাছে সরে ভেঙে দাও মোর ঘুম,-
শিহরিয়া ওঠে তব চুম্বনে সুপ্ত নিশি নিঝুম,
ধরা পড়ে ওই ঘন চুম্বনে ব্যাকুল শুক্লা রাতি;
রাত শেষ হয় কাহিনী তোমার অশেষ শাহেরজাদী।।

মম স্বপ্নের চির-রাণী তুমি, কে বলে তোমারে বাঁদী?
তোমার কাহিনী আমার মর্মে অশেষ শাহেরজাদী।
তোমারে দেখেছি ঘুমভাঙা রাতে মোর উপাধান পাশে,
বহুদূর হ’তে যেন ও বুকের পুষ্প-সুরভি আসে;
জানি না সে কোন অচেনা বেনের তরুণী হাস্‌নাহেনা
চিরদিন মোর অচেনা থেকেও হয়েছে পরম চেনা;
চেনা-অচেনার হাস্‌নাহেনার মালঞ্চে চির-সাথী
রাত শেষ হয় কাহিনী তোমার অশেষ শাহেরজাদী।।

যেখানে জীবন-মৃত্যু আলোর কালোর তীব্র ঝারি
সেখানে ছিটালে তোমার প্রেমের রক্তিম পিচকারী।
সাগর-বেলার বাঁকা দিগন্তে তোমার ভূ-বিলাস,-
বাঁকা কটাক্ষ করেছে ক্ষণিক কালিমারে উপহাস,
বিপুল স্রোতের মোহনায় তুমি অঞ্চল দিলে পাতি
রাত শেষ হয় কাহিনী তোমার অশেষ শাহেরজাদী।।

তুমি আছো তাই ভয় নাহি পাই। এ তীব্র স্রোতধার
মুছে নেবে যবে তখনো আমরা ফুটিব গুলে-আনার,
আমারি রুধিরে হবে প্রাণরস তুমি পাপড়ির লালী-
এক হ’য়ে যাব দু’জনে মিলিয়া পুষ্পের ভরা ডালি,
হব মিলনের প্রেম-উপহার, হব চুম্বন-তরী,
সেই রঙ্গীন শিখায় মিলন পার হবে বিভাবরী,
তিমির-সাগর হবে তার ভোর পুলকানন্দে মাতি;
রাত শেষ তাই কাহিনী তোমার অশেষ শাহেরজাদী।।