সসাগরা

মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায়
দূর সমুদ্রের ডাক শুনি
(যেন মেঘে মেঘে চাপা দৃঢ় বজ্রস্বরে)
তৃষিত বনানী- বক্ষ মোর।
হে নাবিক! হে মাঝি সিন্দবাদ
ভেঙে ফেলো পরিচিত মৃত্তিকার ডোর।
ভুলে যাই একদিন এ মৃত্তিকা সহস্র বন্ধনে
বেঁধেছিল পলে পলে, দিয়েছিল জীবন- দোলানি;
ভুলে যাই মোর রক্তে মৃত্তিকার লক্ষ অনুকণা!
শিরায় শিরায় মোর সমুদ্রের নীল ঢেউ
করে কানাকানি
-পৃথ্বি সসাগরা।

মাটি দূরে সরে যায়-
মাটি দূরে মরে যায়-
সমুদ্র কি বুকে দেয় ধরা?
চঞ্চল দুরাশা নাচে
সমুদ্রের সর্পিল মালায়
দ্বীপ হ’তে নোনা স্রোতে
কোন্ এক অতৃপ্ত জ্বালায়;
নারিকেল বন ভরি ওঠে কার গান:
সমুদ্র সে নাবিকের প্রাণ।

পেয়েছি নারীর স্পর্শ,
জনতার পরিপ্রেক্ষণায়-
পেয়েছি উজ্জ্বল দিন
তবু তার প্রাণবন্ত সুর
তনুমন করিছে রঙিন!
মাস্তুলে হেলান দিয়ে।
শুনি সেই সংখ্যাহীন সুর
কে যেন ছড়ায়ে যায়
অগণন তারার নূপুর,
সমুদ্র আমার প্রাণ
সসাগরা প্রেমের মুকুর
(এলোমেলো উদাসীন চিন্তার বিশুদ্ধ খড়ে
যেন এক উজ্জ্বল আগুন)
কারা যেন ডেকে বলে;
হে নাবিক হাড়ে আজ ধরে এল ঘুণ,
জরাস্ফীত মেদরাশি।
চারপাশে হ’ল আজ জমা;
জীবন্ত সূর্যের তাপে
শুরু করো সিন্ধু পরিক্রমা।
সে আহ্বান নেমে আসে অস্থি-পরম্পরা-
সমুদ্র-দোলায় দোলে পৃথ্বি সসাগরা
লক্ষ কোটি শিশু বক্ষে ধরি।
আসে অনাগত ভ্রূণ
সমুদ্রের তরঙ্গে শিহরি
জীবনের কুয়াশা গহ্বরে!

কোথায় অযুত শিশু
ভেসে চলে তরঙ্গের উদ্দাম কবরে।
যেখানে উত্তাল স্রোতে দিশাহারা মত্ত এ নাবিক
সমুদ্রের ঘন বনে নাহি খুঁজে পায় তার দিক
শুধু দেখে বহু দূরে জোনাকির উজ্জ্বল প্রদীপ
জ্বলিয়া মাটির মেয়ে মরীচিকা ভালে পরে টিপ;
যার লাগি প্রতি রগে জেগে ওঠে টান
মৃত্তিকা সে নাবিকের প্রাণ।।