ব্যাধি

দিগ্বলয়সম পদ্ম, নিসর্গের শাদা পেন্ডুলাম, আন্দোলিত হয়
দীর্ঘ সরোবরে, আমার যা বাল্যকাল। ঢেউ, লাল নীল পীত, বয়
পাখির স্তবকে শৈশবকুসুমগুচ্ছে নীলিমায়। ভেঁপুর বাঁশরি
বাজে সারাক্ষণ। মারবেলের রঙিন গতির মতো, উড়ন্ত সুন্দরী
লাল বেলুনের, পদ্মের দোলার দীর্ঘ মৃদু কম্পমান উদ্বেলিত
জলযান চালিয়ে সে আসে, অকস্মাৎ আমার ভুবন প্রদীপিত।
কেবল অসুস্থ আমার শরীর, সুস্থ আর সব। আমি, ও শিরিন,
পাখিগুচ্ছ বিকেলের মাঠ, সকলেই স্বাস্থ্যবান উজ্জ্বল রঙিন,
রুগ্ন শুধু এক বন্ধু,- আমার শরীর। দেহ যবে অসুস্থ, শৈশবে,
মেলে দিই করতল, নীলিমাসদৃশ, ঝরন্ত পাতার কলরবে
পকেটে মুঠোতে জমে রৌদ্রকণা, পড়ন্ত তারুকাপুঞ্জ, স্বপ্নে আসে
পরীরা সঙ্গীতময়, ঘুমোয় আমার সঙ্গে, সমুদ্রশয্যায় ভাসে,
উলঙ্গ, নৌকোর মতো, নগ্ন দেহ পরীদের। পেয়ারার মতো তুলে
নিই পরীর পেয়ারাস্তন, গোপন সোনালি চুল জড়াই আঙুলে,
কাটি শাদা দাঁতে। ডুবে থাকি মাখনের স্বাদে। মনে হয় জানে যাদু
সবে, শয্যাপাশে শিরিনের দেহখানি আপেলের মতোন সুস্বাদু।
সবুজ পল্লব দোলে বনময়, ঝরে তারাপুঞ্জ বিশ্বশাখা হ’তে;
শিরিন, পল্লব এক, প’ড়ে রয় আমার দীর্ঘ ললাটের পথে।

শৈশবে যখন স্বাস্থ্য রুগ্ন, সুস্থ ছিলো সারাবিশ্ব আমার জগতে।

সুস্থ যদি এখন শরীর, ভয়াবহ ব্যাধিগ্রস্ত হ’য়ে থাকি আমি,
ও আমার আত্মা, সমগ্র ভূভাগ। সুস্থতা নেই দিবসের
সূর্যতলে, রাত্রির চাঁদের নিচে জলেস্থলে। স্বপ্নে আসে না পরীরা।
স্বপ্নও ভাসে না অন্ধ চোখে। প্রকাশ্য রাস্তায় দিবালোকে, যত্রতত্র
সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করি কিশোরীকুমারী, যেনো আমি কফিনের থেকে
তুলে আনি কুষ্ঠরোগগ্রস্ত এক-একটি শরীর। এখন সর্বদা
রুগ্ন বোধ হয় সব কিছু: ছাত্র, গ্রন্থ, দর্শনার্থী, সেবিকা, ফলফুল,
ঐতিহ্য, সভ্যতা। এক অসুস্থ সভ্যতা, দুরারোগ্য, প’ড়ে আছি,
নর্দমার তটদেশে, পাশের বস্তিতে নাচে আধন্যাংটো বিকৃত রুগ্ন পরীরা।