ডোভার সৈকত

মূল: ম্যাথিউ আরনল্ড

সমুদ্র প্রশান্ত আজ রাতে।
ভরা জোয়ার এখন, ভাসে রূপবতী চাঁদ
প্রণালির জলের ওপরে;- ফরাশিদেশের উপকূলে
আলো মৃদু হ’য়ে নেভে গেলো এইমাত্র; বিলেতের উপকূলশৈলগুলো,
মৃদু আলোকিত ও বিস্তৃত, দাঁড়িয়ে রয়েছে শান্ত উপসাগরের থেকে মাথা তুলে
জানালার ধারে এসো, কী মধুর রাতের বাতাস!
শুধু, পত্রালির দীর্ঘ সারি থেকে
যেখানে সমুদ্র মেশে চাঁদের আলোয় শাদা তটদেশে,
শোনো! তুমি শোনো ঢেউয়ের টানে স’রে-যাওয়া নুড়িদের
ঘর্ষণের শব্দ, এবং অবশেষে,
যখন ফিরে আসে উচ্চ বালুময় তটে,
শুরু হয়, আর থামে, তারপর শুরু হয় পুনরায়,
কোলাহলপূর্ণ ধীর লয়ে, এবং বয়ে আনে
মনে বিষাদের চিরন্তন সুর।

সোফোক্লিজ বহুকাল আগে
শুনেছিলেন এ-সুর অ্যাজিআনে, আর এটা তার মনে
বয়ে এনেছিলো মানুষের দুর্দশার
ঘোলাটে জোয়ার-ভাটা; আমরাও
এই শব্দে পাই একটি ভাবনা,
সেই সুর শুনে এই দূর উত্তর সাগরের তীরে।

বিশ্বাসের সমুদ্রও
একদিন ছিলো ভরপুর, এবং পৃথিবীর তটদেশ ঘিরে
ছিলো উজ্বল মেখলার মতো ভাঁজেভাঁজে।
কিন্তু এখন আমি শুধু শুনি
তার বিষন্ন, সুদীর্ঘ, স’রে-যাওয়ার শব্দ,
সরে যাচ্ছে, রাত্রির বাতাসের শ্বাস, বিশাল বিষণ্ণ সমুদ্রতীর,
আর বিশ্বের নগ্ন পাথরখণ্ডরাশি থেকে।

আহা, প্রিয়তমা, এসো আমরা
সৎ হই একে অপরের প্রতি! কেননা এই বিশ্ব, যা আমাদের সামনে
স্বপ্নের দেশের মতো ছড়িয়ে রয়েছে ব’লে মনে হয়,
যা এতো বৈচিত্র্যপূর্ণ, এতোই সুন্দর, এমন নতুন,
তার সত্যিই নেই কোনো আনন্দ, কোনো প্রেম, কোনো আলো,
নেই কোনো নিশ্চয়তা, নেই শান্তি, নেই বেদনার শুশ্রষা;
আর আমরা এখানে আছি যেনো এক অন্ধকার এলাকায়,
ভেসে যাচ্ছি যুদ্ধ ও পালানোর বিভ্রান্ত ভীতিকর সংকেতে,
যেখানে মূর্খ সৈন্যবাহিনী রাত্রির অন্ধকারে যুদ্ধে ওঠে মেতে।