খাপ-না-খাওয়া মানুষ

কারো সাথেই খাপ খেলাম না। এ-ঠোঁট আঙুল
পা থেকে মস্তক ও মধ্যবর্তী হৃৎপিণ্ড যখন যেখানে রাখি
সেখানেই সূচারু শান্তিশৃংখলার মধ্যে জন্ম নেয় ঝড়-ত্রাস-বিপর্যয়।
বাতাস লাফিয়ে ওঠে, লকলকে জিভ দেখা দেয় আগুনের,
গোলাপ রূপান্তরিত হয় বারুদস্তূপে, শক্র গ্রহের হিংস্র রবোটের
মতো ঝাপ দেয় চাঁদ। সরষে খেতের হলুদ বন্যার
মধ্যে এক বিকেলবেলায় একরত্তি মিল হয়েছিলো এক কিশোরীর
ঠোঁটের সঙ্গে, কিন্তু সন্ধ্যার আভাসেই সে দানবীতে
রূপান্তরিত হ’তে থাকলে আমাদের বিরোধ বাঁধে।
সূর্যাস্তের সাথে বনিবনা না হওয়ায় চাঁদ ওঠার অপেক্ষায় রইলাম
আর সারারাত কাটলো আমাদের প্রচণ্ড উত্তেজনা, গালাগাল,
হাতাহাতিতে। উত্তেজনা এখনো কাটে নি;- গলির অন্ধ
মোড়ে বা পার্কের ঝোপের আড়ালে কোনো দিন একলা দেখা হ’য়ে গেলে
ছোরা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি একে অন্যের দিকে।
পতিতার সাথে খাপ খেলাম না সে-রাতে যেতেতু সে আমার মতো
সমস্ত সভ্যতা-শাস্ত্র-আসবাবসহ উদ্ধারহীন অতলে পাতালে
নামতে রাজি নয়; সতীর সাথেও মিললো না, কেননা সে
আমার মতো লিঙ্গ ও যোনিহীন সৎ হ’তে ঘৃণা করে।
বন্দুকের সাথে বন্ধুত্বের সমস্ত সম্ভাবনা নষ্ট হলো যেহেতু সে
যথেষ্ট হিংস্র হ’তে রাজি নয়; গোলাপের সাথেও জমলো না
কেননা সে আমার সমান কাঁটাহীন ঘ্রাণ হ’তে রাজি নয়।
সে-সমস্ত রেডিমেইড পাজামা-ট্রাউজার-শার্ট-অন্তর্বাস বাধ্য হ’য়ে
পরতে হয় সকলকে, তার কোনোটার সাথে মিল হচ্ছে না
জংঘা বা নিতম্ব বা বুকের। ইতরের মলে নোংরা পাজামার মতো
বঙ্গীয় সমাজ পরতে গিয়েই দেখি একমাত্র বিশুদ্ধ বদমাশ
ছাড়া আর কেউ ওই ন্যাকড়া পরতে পারে না। পুঁজিবাদী ট্রাউজার
সংঘতান্ত্রিক শালোয়ার পরতেই শোষণ শুরু হয় রক্তনালিতে।
দ্বান্দ্বিক ইউনিফর্মও জ্যোৎস্নায় চেপে ধরে স্বপ্নের স্বরযন্ত্র।
গোলাপ-বন্দুক-সংবিধান ইত্যাদি ব্যবস্থার সাথে
খাপ না খাওয়ায় ধীরে ধীরে হ’য়ে উঠছি আমি- কবি।