শহর

দুলছে বাস্তব: পারদের মতো পদ্মপাতা; আমি তাতে শাদা জল ফোঁটা
এদিকে-সেদিকে আন্দোলিত; হঠাৎ ছলকে পড়ি অবাস্তব স্বপ্ন-ঘুমে
বস্তুর মাথায়। এক বিন্দু গাঢ় মধু জড়ো হই তন্দ্রাতুর শহর-কুসুমে;
সিল্কের অন্ধকার-পরা এই রম্য রাত্রি, সদ্য ঠাণ্ডা ঘুম-থেকে-ওঠা।
জলে গ’লে যাচ্ছে বাতিস্তম্ভ সময়ের; নীল ঢেউয়ে দোলে বাড়িঘর
বস্তি স্বপ্নের টাওয়ার বাস ও আকাশ। ভিখিরির দাঁতে গোলগাল চাঁদ
আর ভাঙা পাউরুটি, মাংসে ঢুকছে তার স্বপ্ন ও বস্তুর সঙ্গমের স্বাদ;
সময়জীর্ণ পদ্মের কানে মাতাল মাইক্রোফোন ঢালে শৈশবের স্বর।

জুনকোর দেহ ভাসে শ্যামল মেঘেল শূন্যে, ওষ্ঠ থেকে লাল রূপকথা
ঝ’রে পড়ে; মাথার ওপরে ওড়ে পাখির স্তবক, নগ্ন আর্দ্র রূপসীরা,
ফেটে পড়ে কংক্রিটে একাকী দীপ্ত সঙ্গীহীন গোলাপের শিরা-উপশিরা;
আমার ত্বকের তলে কিশোরী ঘুমায়- রক্তে সন্ধ্যার সিঁড়ির অভিজ্ঞতা।
মানুষেরা দ্যাখে চোখে তাদের ক্ষতের মতো দগ্ধ স্থির শাদা চাঁদ ভাসে
দ্বীপপুঞ্জে যানবাহনের শিরে; বস্তুপুঞ্জে ঝলে যৌথস্মৃতির উল্লাস
নিয়ে রক্তমাংসে বসবাসী বাস্তবতা; স্বপ্ন-ভরাক্রান্ত ব্যাপক আকাশ
বেলুনচঞ্চল উড়ে চ’লে যায় পৃতঙ্গপাবকজ্যোৎস্নখচিত আকাশে।

শহরের ঠোঁটে ঠোঁটে রাখি, দু-পায়ে শহর ক্রমে জড়ায় আমাকে,
ঢেউয়ে দুলি সারারাত, আমার দেহের তলে শহরও দুলতে থাকে।