আগন্তুক

পথের বাঁধন কাট্‌ব যখন করছি মনে-মনে-
এমন সময় কে রে পথিক- দাড়ালি প্রাঙ্গনে!
ছোট্ট তোর ঐ হাত দুখানি চিত্তে লাগায় ভয়,
সকল বাঁধন চাইতে যদি শক্ত বেশীই হয়!
ফুটফুটে ঐ মুখের মাঝে পুট্পুটে ঐ আঁখি
মরা গাঙে আবার ফিরে’ বান ডাকাবে নাকি!

এলি যদি- হেথায় কেন, আয়রে বুকের মাঝে,
রক্ততালে যেথায় আমার মর্ম্মমাদল বাজে;
আয়রে মুক্তা শুক্তি-চেরা, আয়রে আমার হীরে,
আয়রে আমার দখিন-হাওয়া বৈতরণীর তীরে;
আয়রে আমার শরৎ-পদ্ম বর্ষাশেষের প্রাতে,
আয়রে আমার নুনের ছিটে বিস্বাদ জিহ্বাতে।

আয়রে আমার ব্যাধিশেষের ফিরিয়ে-পাওয়া ক্ষুধা,
আয়রে চৈত্র-তৃষ্ণকালের একটি গেলাস সুধা;
আয়রে আমার চোখের আলো, মৰ্ম্মের নিশ্বাস,
নিরাশ মনের আয়রে আশা, ধর্মের বিশ্বাস।
বাঁধিস্ যদি, দুহাত দিয়ে ভালো করেই বাঁধ্-

একটা কিন্তু কড়ার কর্তে হবে আমার সাথে,
পথ দেখিয়ে যেতে হবে পথের সীমানাতে!
চোখ দুটি মোর পথের ধূলায় আধেক যে রে আঁধা,
সরল চোখে ঘুচাবি সেই অন্ধকারে বাধা;
সত্য-পথের যাত্রী যে তুই, সঙ্গে নিয়ে চল্-
তেরি আলো আজকে আমার যাত্রার সম্বল।

সেই ভালো, আজ দুজনাতে যাত্রা করি চল-
যতক্ষণ না মিলায় কানে পথের কোলাহল;
ধূলিধূসর ধরাপথের ধূলিটুকুন মেখে,
পথটি যেন সবার তরে যেতে পারি রেখে।
ভাব্ছি মনে, বাঁধন কাঁটার কথাটা কি মিছে-
পথের রাজা হাসছে বুঝি পথিকজনের পিছে!