চরকা-সঙ্গীত

আরো জোরে ঘোরা ও চরকা, আরো সূতা চাই-
তিরিশ কোটি লোকের লজ্জা রাখ্তে হবে ভাই;
ঘোরাও চর্কা আপনার মনে এক্লা নিশীথ-রাতে,
ঘোরাও চর্কা সব্বাই মিলে কর্ম্ম-পাগল প্রাতে;
ঘোরাও চর্কা কৰ্ম্মের মাঝে কৰ্ম্মের অবসরে,
ঘোরাও চর্কা কর্ম্ম ফেলে’ একান্ত অন্তরে;
শব্দ উঠুক আকাশ ছেয়ে ঘর্ঘর ঘর্ঘর-
সেই ঘর্ঘরে এক হয়ে যাক্ পর্-ঘর ঘর্-পর!
চাকায় চাকায় আগুন উঠুক্, হাতে পড়ুক ঘাঁটা,
চোখের দৃষ্টি আসুক ফিরে’ বাড়ুক বুকের পাটা!

একশ’ বচ্ছর দেখা গেছে উল্টে বয়ের পাতা,
একশ’ বচ্ছর লেখা গেছে গোলামখানার খাতা;
একশ’ বচ্ছর কম বড় নয়, জাতির ইতিহাসে,-
ফল যা হ’ল, দেখা গেল- চোখ্ ফেটে জল আসে।
এত বড় প্রকাণ্ড দেশ শস্যে পণ্যে ভরা-
লক্ষ্মী যাহার স্তন্যে অন্নে পুষ্ত সকল ধরা;
আজ দেখ’ তার আপ্নার ঘরে নাইক অন্ন কারো,
লজ্জাবস্ত্র, তারো জন্য পরের দেনা ধারো;
বিজ্ঞ যত বিদ্যাবাগীশ অতি বুদ্ধির দল,
এমনি করে’ই সাধের দেশটা পাঠায় রসাতল!

আজকে তবে বারেক ফিরে’- ‘জয় মা ভারত’ বলে’,
একটা বচ্ছর দেখ্ দেখি ভাই নতুন পথে চলে’;
যে বল্ছে আর যা বলছে সব পড়া পুঁথির ভাষা,
দুহাত দিয়ে দূর করে দে’ বুদ্ধি সর্ব্বনাশা;
একটা বচ্ছর কর্ত দেখি আপ্নার ঘরের কাজ,
শোন দেখি আজ কি বলেন ঐ গান্ধী-মহারাজ!
সব ছেড়ে আজ চরকা-চক্র-সুদর্শন,
কেটে যাবে সকল আঁধার বাধা ও বন্ধন;
চাকায় চাকায় উঠবে আগুন- হাতে পড়্বে ঘাঁটা-
সূতোয় সূতোয় পড়্বে ঢাকা দেশযোড়া লজ্জাটা।

একটা বচ্ছর, নয়ক বেশী, দেশের ইতিহাসে,
কেঁদে-কেটেই কাট্ছে ত তা সব্বার বারমাসে;
সূতো কেটেই, না হয়, বচ্ছর কাটুক এবারকার,
সে সূতো আজ আশার সূত্র দেশযোড়া দরকার।
ঝর্কায় ঝর্কায় চর্কার উৎসব করুক সারা দেশ,
শুনুক সরকার পণ এবারকার স্তব্ধ নির্নিমেষ;
লাগাও চর্কা রাত্রিদিনে তিরিশ কোটি মেলি’;
লাগাও চরুকা গর্কামী সব ছেঁড়া অকাজ ফেলি’;
পরাও খদ্দর ইতর ভদ্দর, ঘরদোর সামলাও সব-
স্ত্রীলোক মর্দ লাগাও হর্দ্দম চরকা-মহোৎসব।
হাঁকছে সর্দার খুব খবরদার, মন দাও চরকার কাজে,
চর্কার আহ্বান চর্কার জয়গান ঐ শোন্ কানে বাজে;
চর্কার গুণ-গুণ-গুঞ্জন লাগুক কাল্পনিকের কানে,
চর্কার ঝঙ্কার-ওঙ্কার বাজুক অধার্ম্মিকের প্রাণে;
চর্কার টঙ্কার উঠুক বক্তা রাজনীতিকের মুখে,
চর্কার মন্তর ভুলাক অন্তর তিরিশ কোটির বুকে;
ঘর্ঘর ডাকে ঘর-ঘর ঘুরুক কৰ্ম্মের নূতন চাকা-
পাকে পাকে যাক্ খুলে’ আজ মোহের বাঁধন ফাঁকা;
চাকায় চাকায় আগুন উঠুক, হাতে পড়ুক ঘাঁটা-
চোখের দৃষ্টি আসুক ফিরে’, বাড়ুক বুকের পাটা।