দেশের লোক

ঝরঝরে’ ঘরখানি উলুখড়ে কোনমতে ছাওয়া,
মাটীর দেয়ালে ক’টা ফাঁক দেওয়া- আসে আলো হাওয়া
বাঁশের খুঁটিতে আঁটা পাশে দুটি দাওয়া পরিপাটি-
নিকান’ গোবরজলে, ধারে ভাঙা দরমার টাটি।

আরো দুটি ঘর আছে- একখানি প্রাচীরের পাশে-
বাহিরের একচালা- লোকজন যদি কেউ আসে;
ভিতরের গায়ে তারি পাকের চালাটি সবে তোলা,
কূপটী তাহারি ধারে, কাছে এক শস্যহীন গোলা।

গরুর চালাটি আছে আঙিনার’ এককোণ ঘেঁসে,
তারি ধারে সদরের আগলটী দেয়ালের শেষে;
আঙিনার মাঝখানে গোটাকত গাঁদা ও দোপাটি;
পুঁই ও পালঙ্-শাক-তারি পাশে লাউয়ের মাচাটি।

গাছপালা বেশী নাই, এককোণে ডালিমের গাছে
ছেঁড়া নেকড়ায় বাঁধা ফল ক’টা’- কাকে খায় পাছে।
তারি কাছে ঝাড়-কত’ দু’বছরে’ করবীর চারা-
থােকা-থােকা রাঙা ফুলে এই শীতে সাজিয়াছে তারা।

তুলসীর মঞ্চটী- তাই শুধু ইঁট দিয়ে গাঁথা,
তক্তকে বেদীখানি- পায়না পড়িতে ঝরা পাতা;
ঘরের গৃহিনী দিনে দশবার বেদীটি নিকায়-
মূৰ্ত্তিমান্ নারায়ণ-সাঁঝে নিজে দীপটি দেখায়।

নিয়ত প্রণাম করে- কাজ বা অকাজ সব ফেলে’,
তাই পাশে দাগ-ধরা’ সিঁথার সিঁদুরে আর তেলে;
ছেলেটি তাহারি কাছে খেলা করে কাদামাটি নিয়ে,
যতবার ধূলা মাখে, ততবার ফেলে ঝাট্ দিয়ে।

রোজ আনে রোজ খায়- ঘরদ্বার কি হবে আর,
খেটে এনে দিয়ে-থুয়ে বড় বেশী বাঁচে না যে তার!
ধৰ্ম্ম বল’ কৰ্ম্ম বল’ যাহা কিছু এই সুধু আছে-
ব্যথা পেলে বাহু তুলে’ জানায় তা’ আকাশের কাছে।

অবিচার অত্যাচার- ভাবে নিজ করমের ফল,
নয়নের জল ছাড়া তাই কিছু থাকেনা সম্বল;
এই দেশ- এই লোক- হাসিও না শিক্ষা-অভিমানী,-
ধৰ্ম্ম জানে তার কাছে সত্য মূল্য কা’র কতখানি!