কাজ্লা দিদি

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
মাগো আমার শোলক্‌-বলা কাজ্‌লা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে, থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে,-
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,
মাগো, আমার কোলের কাছে কাজ্‌লা দিদি কই?

সেদিন হতে কেন মা আর দিদিকে না ডাকো,
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন দিদি বলে ডাকি তখন,
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি- তুমি কেন চুপ্‌টি করে থাকো?

বল্ মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল বিয়ে হবে!
দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকাই গিয়ে-
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন ক’রে রবে?
আমিও নাই- দিদিও নাই- কেমন মজা হবে!

ভূঁই-চাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্‌নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটা লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিয়ো না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কি মা বল্‌।

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই;-
এমন সময় মাগো আমার কাজ্‌লা দিদি কই?
লেবুর তলে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে;
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না- তাইতো জেগে রই,…
রাত্রি হোল মাগো, আমার কাজ্‌লা দিদি কই?


[বাজারে প্রচলিত অনেক পুস্তকে কবিতাটির অনেক শব্দে বিকৃতি রয়েছে। ‘বাঁশ-বাগান’, ‘ভুঁই-চাপা’ এর স্থলে ‘বাঁশবাগান, ভুঁইচাপা’, সেমিকোলনের স্থলে কমা বা দাড়ি দেয়া হয়েছে, ‘লেবুর তলে’ স্থলে ‘নেবুর তলে’, ‘জোনাক জ্বলে’ এর স্থলে ‘জোনাই জ্বলে’ এমনকি প্রচলিত বোর্ড বইতে দ্বিতীয় লাইনে “মাগো” শব্দের পর কমা দেওয়া হয়েছে যা মূল বইতে কমা নেই। ‘সেদিন হতে কেন মা আর দিদিকে না ডাকো;’ এ লাইন বিকৃত করে লিখা হয়েছে ‘সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো’; “মাড়াস্‌নে” এর স্থলে হসন্ত তুলে দেওয়া হয়েছে, “কেমন ক’রে রবে” এর স্থলে “কেমন করে রবে” সহ বিভিন্ন ভুল ছাপা রয়েছে যা কবিতার মূল ছন্দকে বিকৃত করে। এছাড়াও মূল বইতে প্রতি প্যারায় পাঁচ লাইন থাকলেও কোথাও কোথাও এটিকে ছয় লাইন করে প্রতিটি প্যারা লিখা হয়েছে।]