নন্দীর অনুশাসন

* * * * * * * * দেশে এল দুর্ভিক্ষ-
ক্রন্দনধ্বনি ভরিল অবনী আকাশ অন্তরীক্ষ;
‘কনসার্ট’ নয়, ভারি কর্কশ বর্ব্বর হাহাকার-
শৈলশৃঙ্গে কঁপিয়া উঠিল গৌরীর দরবার;
নন্দীভৃঙ্গী- নখী ও শৃঙ্গী অমনি আসিল ছুটি’,
বর্ব্বরদলে কহিল হাঁকিয়া রোষে করি’ ভুরুকুটি-
চুপ্ কর্ সব, রাখ্ কলরব, ঢের সহিয়াছি- আর না,
বেত্র-আঘাতে থামাব এখনি মিথ্যা ও নাকি কান্না;
অন্ন না থাক, রয়েছে ত জল, তা ছাড়া জংলাগাছে,
ভাল করে খুঁজে দেখ, দেখি, সেথা ‘লেবু টেবু’ সবি আছে!
বেঁচে গেল যারা, মুছিয়া অশ্রু কোনমতে দিল পাড়ি,
অন্নের লাগি অন্য আশায় বেচে-কিনে’ ঘর বাড়ী !
দলে-দলে চলে মিলিয়া সকলে- এমনি গোঁয়ার তারা,
শুধু তাই নয়, শিরে বোঝ বয়, ক্ষিদে-ক্ষিদে করে’ সারা;
পাথেয় নাইক, পথ চলে তবু, বলে- পার হব নদী,
কান্নার জোরে কাণ্ডারীদের কড়ি ফাঁকি দেয় যদি!
পারঘাটা পাশে মরঘাটা আছে, সেথা পাঠাবার লাগি’
শৃঙ্গ উঁচায়ে ভৃঙ্গীর দল খাটে সারারাত জাগি’!
তবু যে চাষার চেঁচায় কেবলি, খাবে যেন গোটা দেশ-
আধপেটা খেয়ে উপোস তবু ত হ’লনাক ‘অভ্যেস’!

গোলমাল দেখে’ মহা ক্রোধান্ধ বন্দ করিতে রব,
হাঁকিল নন্দী- এখনি বন্দী করিব তোদের সব;
কথা যদি তোরা বলিতেই চাস্, গিয়ে দশ ক্রোশ দূরে,
যাহা খুশী তাই বলিতে পারিস চুপি-চুপি মিহি সুরে-
না, না, চুপি-চুপি ফিস্ ফিস্ কথা আরো সে খারাপ ভারি,
একলা-একলা যদি হয়, তবে সায় দিতে তার পারি;
তবে যদি হয় স্ত্রী-এর সঙ্গে, দুজনে নাই আপত্তি,
তার বেশী হ’লে আবদার আর সহিবনা একরত্তি;
শৃঙ্গের সাথে ত্রিশূল বাঁধিয়া যেণ্ডেরে দিব ছাড়ি’-
গুঁতায়ে বাহির করিবে তোদের অন্নবিহীন নাড়ী!

যোড় করি’ কর, জন কত শেষে যুটিল নন্দী কাছে,
কহে- প্রভু, আজি তোমার চরণে নিবেদন কিছু আছে;
খাইতে শুইতে চলিতে বলিতে সবই যদি হ’ল মানা,
কি করিব মোরা, বলে’ দাও শুধু, হয়ে যাক তাই জানা।
হাসিতে ভরিয়া গাল দুটি তার, নন্দী কহিল হেঁকে,
তাসের রাজ্য করিনু তোদের, জেনে রাখ্ আজ থেকে;
টেক্কা গোলাম সাহেব ও বিবি নহলা দহলা আটা,
এই হাতে হবে যখন যা খুসি- কাটা আর তার বাঁটা;
চিৎ হয়ে শুধু পড়ে’ রবি তোরা মোদের খেঁলার কালে,-
সব চেয়ে মান লিখিয়া দিলাম খাস্-গোলামের ভালে!