স্বপ্ন-দেশে

আজ ফাগুনী চাঁদের জোছনা-জোয়ারে
ভুবন ভাসিয়া যায়,
ওরে স্বপনদেশের পরী-বিহঙ্গি
পাখা মেলে উড়ে আয়!
এই শ্যামল কোমল ঘাসে,
এই বিকচ কুন্দ রাশে,
এই বনমল্লিকাবাসে,
এই ফুরফুরে মলয়ায়-
তোর তারালোক হতে কিরণ-সুতায়
ধীরে ধীরে নেমে আয়।

দেখ্‌ ঘাসের ডাঁটায় ফড়িং ঘুমায়
সবুজ-স্বপন-সুখে,
দেখ্‌ পদ্মকোরকে অচেতন অলি
শেষ মধুকণা মুখে!
হেথা ঝিঁঝির ঝিঝিট তান,
দেখ্‌ নিশিশেষে অবসান,
ছোট টুনটুনিদের গান
এবে বিরত ক্লান্ত বুকে-
দেখ্‌ মোহ-মূৰ্ছিত মুখর ধরণী,
সব ধ্বনি গেছে চুকে।

তোরে শিরীষ ফুলের পাপড়ি খসায়ে
পরাগ করিব দান,
তোরে রজনীগন্ধা-গেলাস ভরিয়া
অমিয়া করাব পান;
শেষে ঘুম যদি তোর পায়,
হোথা ঘুমাবি হিন্দোলায়,
মোরা মৃদু দোল দিব তায়।
গাহি মৃদু গুঞ্জন গান-
‘চারু উর্ণনাভের ঝিকিমিকি জালে
কেশরের উপাধান।’

শেষে জোনাকির আলো নিভাবে যখন
ঊষার কুয়াশাসারে,
মোরা স্বপন-শয়ন ভাঙি দিব তোর
পাপিয়ার ঝঙ্কারে;
যদি ফিরে যেতে মন চায়,
যাস্‌ ঝিরি-ঝিরি উষা-বায়,
চড়ি প্রজাপতির পাখায়-
হিমসিক্ত শিশিরধারে;
সাথে নিয়ে যাস্‌ এই রজনীর স্মৃতি
ধরণীর পরপারে।