সরোবরে সন্ধ্যা

শরাস্তৃত সরোবর; তীরে তীরে তারি তালীবনশ্রেণী;
শ্যামল-সরসী-শিরে পদ্ম-বিভূষণা শৈবালের বাণী।
ধীরে নামে সন্ধ্যাসতী ধূসর অঞ্চল অম্বরে লুটায়ে;
ঝিল্লির মঞ্জীরমালা ঝিমি-ঝিমি-ঝিমি বাজে পায়ে পায়ে।

জনশূন্য দুটি তীর- ধীবরসন্তান গেছে ঘরে ফিরে,
ডোঙাগুলি কূলে বাঁধা শিহরিয়া কাঁপে সন্ধ্যার সমীরে;
গোধন গুছায়ে লয়ে নিভ-নিভ হতে গোধূলি-আলোক,
ফেলিয়া কলার ভেলা, ঘরে ফিরে গেছে রাখাল বালক।

নিভৃত কুলায়ে দিল মরালের দল শেষ পাখাঝাড়া,
নিঃসঙ্গ মরাল-শিশু চিৎকারিছে দূরে হয়ে দলছাড়া;
ধূসর আকাশপটে তরঙ্গিয়া দিয়া ভ্রূবঙ্কিম রেখা-
অস্পষ্ট নক্ষত্রালোকে বাদুড়ের শ্রেণী উর্ধ্বে দিল দেখা।

সিক্ত শৈবালের গন্ধে পূর্ণ হয়ে উঠে সন্ধ্যার বাতাস;
হিমসিক্ত শস্যক্ষেত্ৰ তারি সাথে ফেলে দিনান্ত-নিশ্বাস।
জলে স্থলে নভস্তলে মোহিনী সন্ধ্যার নির্বাক মন্তরে-
অশরীরী কম্পযন্ত্রে শান্তিরসধারা ঝর-ঝর ঝরে।