শরৎরাণী

কোন্ প্রভাতের শিশির-ছাওয়া আকাশ-রথের সোয়ার হয়ে
শরৎরাণী বেরিয়েছিলেন প্রথম তাঁহার দিগ্বিজয়ে!
আলোর ঘোড়া সঙ্গে যোড়া- ইঙ্গিতে তাঁর চল্ল উড়ে’
হাওয়ার মত মুক্তবাধা, যুক্তগতি ত্রিলোক যুড়ে’;
কোন্ অতীতে কোথায় হ’তে যাত্রাটি তাঁর নাইক জানা,
কিন্তু তাঁরি শক্তি আজও মর্ত্তে আসি’ দিচ্ছে না!

ঝঞ্ঝাবাহন পিঙ্গ-নয়ন মেঘের চূড়া মাথায় পরা,
বিদ্যুৎ-অসি হস্তে ধরা’ পৃষ্ঠ-তূণে বর্ষা ভরা,
কৃষ্ণবরণ অন্ধ শ্রাবণ অম্নি কোথায় পড়্ল সরে’,
দিগ্ধধূরা চাইল ফিরে’ হাস্যালোকে বিশ্ব ভরে’;
দৈত্য-হাতে মুক্তি লভি’ ফুল্ল ধরা তৃপ্তি-সুখে,
দীপ্তিভরা চক্ষু মেলি’ দিগ্বিজয়ীর দৃপ্ত মুখে।

শরৎরাণীর উষ্ণীষেতে সূৰ্য্যদেবের বহ্নি জ্বলে,
কণ্ঠে তাহার চন্দ্রকলার মুক্তামালার দীপ্তি ঝলে;
নেত্ৰ-তারায় জ্বলছে তারা, আস্যখানি হাস্যে মাখা,
বক্ষবাসের স্বর্ণ-চেলি রৌদ্ররাগের বর্ণে আঁকা;
শুভ্রগুচি রৌপ্যরুচি সৌদামিনী স্তব্ধকায়া-
হিমাচলের যোগ্য মেয়ে, যোগেশ্বরের ঘোগ্য জায়া।

দ্যুলোক হ’তে ভূলোক-পথে এলেন রাণী ধরার দেশে,
সিন্ধুমাঝে শঙ্খ বাজে, ফুল্ল সরিৎ ফেল্ল হেসে;
দীঘির কূলে উঠল দুলে’ কাশের চামর হঠাৎ ঝলি’,
ছাতিম দাঁড়ায় ছত্র ধরি’, শিউলি ছিটায় লাজাঞ্জলি;
স্থল্-কমলে জল্-কমলে পৃথ্বিরাণীর মর্ম্মখানি
উঠল ফুটে’ এক পলকে, যুক্ত হ’ল পদ্মপাণি।

কৈলাস হ’তে তুই কি এলি, তুই কি মা সেই শরৎরাণী,
তোরই ত মা নামটি উমা, তোরই স্বামী ত্রিশূলপাণি!
গিরিরাজের গৌরী মোদের, মা-মেনকার নেত্রতারা,
মুছিয়ে দে মা আজকে তবে সন্তানের এ অশ্রুধারা;
বিজয়রাণী, জয় করে’ নে এক নিমেষে আবার ফিরে’
নয়ন-জলের বন্যা-ঘেরা চরণ-তলের রাজ্যটিরে।

এলি যদি, আয় তবে মা, বঙ্গে আবার সঙ্গে লয়ে
রঙ্গভরা হাসির মেলা আগের মতন, আয় অভয়ে!
অন্নহারা বস্ত্রহারা সৃষ্টিছাড়া নিঃস্বদলে
এক পলকে আন্ মা ডেকে তোর বরাভয় ছত্ৰতলে;
কাটিয়ে দিয়ে মনের মসী, টুটিয়ে সকল দৈন্যদশা,
শারদে মা, এই শ্মশানে আনন্দ-হাট আবার বসা।