দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার

দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।।

দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, কার আছে হিম্মৎ?
কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ,
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।।

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত-সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদেরে পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ,
কাণ্ডারী! আজি দেখিব তোমার মাতৃ-মুক্তি-পণ!
‘হিন্দু না ওরা মুস্লিম?’ ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন?
কাণ্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।।

গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গরজায় গুরু বাজ;
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ।।

কাণ্ডারী, তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি, নিয়েছ যে মহাভার।।

কাণ্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর
বাঙালির খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইবের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর।
উদিবে সে রবি আমাদেরি-খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।।

ফাসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কাণ্ডারী হুঁশিয়ার।।

[বৃহন্নট-কেদারা- একতালা]