আমি এসবের কেউ নই, নদীজল মেঘের মানুষ

আমাকে চিনতে পারোনি তোমরা, কেবল
বুঝেছো ভুল
আমি এসবের কেউ নই, এই শহর, লোহা ও যন্ত্র,
ইটকাঠ, মিস্ত্রির করাত
লেদ মেশিনের শব্দ, আমি এসবের কেউ নই, এই
যন্ত্রের, ধোঁয়ার
আমি দূর উত্তরবঙ্গের সবুজ বনের
স্নিগ্ধ ছায়ার মানুষ
নদীর আত্মীয় আমি, গাছের গহন মমতা মাখা চোখ,
এখনো বুকের মধ্যে জিওল মাছের মতো নড়ে ওঠে স্মৃতি
আমি সেই ভাটিয়ালি গানের মতো
উদাস দুপুর
আমাকে চিনতে পারোনি তোমরা আমি এই
ব্যাঙ্ক, বীমা, শেয়ার বাজারের কেউ নই
আমি আউশ ও ইরির তাজা গন্ধের মানুষ
পূজামণ্ডপের সামনে রাত ভোর করে যাত্রা শোনা বিহ্বল বালক
আমি সেই খেয়ানৌকা পাড়ি দিয়ে আসা,
গহনার নৌকায় যাত্রী
তুমুল বৃষ্টিতে ভেজা আমি সেই
শ্যামল কিশোর;
তোমরা চিনতে পারোনি কেউ, আমি
ইটকাঠ, লোহা, যন্ত্রের কেউ নই
আমি নদীর ঢেউয়ের সঙ্গী, অঝোরে বর্ষায়
ভেজা ভোরের শালিক
আমি ক্ষেতের আলের পাশে সবুজ কোমল ঘাস
মাঠের মৌনতা
সেই মোষের বাথান থেকে ফেরা রাখালের বাঁশি;
আমি তোমাদের এই ধোঁয়া ও যন্ত্রের কেউ নই,
এই ফ্ল্যাটবাড়ি, লিফট ও
লোহার কেউ নই
আমি খরাজালপাতা সোঁতা ও বিলের মাঝ থেকে
উঠে-আসা
পাখিদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো মানুষ
আমার বুকের মধ্যে অথই বর্ষার জল,
আদিগন্ত ভাসানো সবুজ
আমি তোমাদের জিন্স ও জুতোর কেউ নই,
কাঠের খড়ম পায়ে মাঠ পার হই
আমি সেই নদীর জলের ঘ্রাণ মেখে, সবুজ পাতার ঘ্রাণ
নিয়ে আকাশের অভ্যর্থনা করি
আমি এসবের কেউ নই, এই যন্ত্রের, লোহার, করাত কলের
আমি মাটির মেঝেতে হাঁটা, ফুলের
গন্ধে জাগা
নদীজল মেঘের মানুষ।

১১.২.৯৭