এ আমার জল ও মাটির কাজ

আমার যা-কিছু সব ঠেকে শেখা, চিত্রকর্ম দেখে
আমার মূর্তি গড়ি না,
এই কুমোর, সুতপুত্র মাটি কাঠ আয়ত্ত করেছি
নিজে আমি চাকে বসে মাটি ছেনে মৃৎপাত্র গড়ি
আমার মাটির সরা সম্পূর্ণ আমার;
ছাঁচে ঢেলে দলাই মলাই করে চকচকে চাঁদির টাকা
আমি বাজারে ছাড়িনি
সুতপুত্র তার এই ধনুর্বিদ্যা নিজের অর্জন, নিজেই সে
গড়েছে ধনুক, পরিয়েছে ছিলা।
এই মাটিতে আছাড় খেয়ে আমি দাঁড়ানো শিখেছি,
নাকেমুখে জল খেয়ে শিখেছি সাঁতার
জলে পড়ে নদী চিনি, পা ফসকে মাটিতে পড়ে
পাহাড় চিনেছি,
কিন্তু আমি দীক্ষিত হওয়ার জন্য বিদ্যাপীঠ
টোলের দ্বারস্থ হইনি;
এ আমার মাটি ও মোমের কাজ, শিল্পের শরীর
নিজেকে খনন করে উদ্ধার করেছি আমি পুরাকীর্তি,
জাদুর জগৎ
নিদ্রা অনিদ্রার মাঝে আমি এই অক্ষরের চারাগাছ
রোপণ করেছি।

আমি পাহাড়ে উঠেছি একা, পর্বতারোহী দলে
যাইনি কখনো
পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতু সহস্রবার সঙ্গীহীন
অতিক্রম করেছি আমি,
কতোবার অতলে ডুবেছি, ভেসে গেছি উত্তাল খর
জলস্রোতে
বিষপাত্র মুখে তুলে চিনেছি অমৃত,
ক্ষতবিক্ষত হয়েছি কাটায়, রক্তাক্ত আঙুল বেঁধে
আবার হেঁটেছি,
দুর্লভ এ কাঠগোলাপ আর স্থলপদ্ম আমি
ফুটিয়েছি শোকে ও অশ্রুতে।

এই যে কাঠখোদাই, এই যে হাতের কাজ, তাম্রলিপি,
বর্ণ ও বৃত্তের খেলা,
এই রূপ ও অরূপ, ব্যাপ্তি ও ব্যঞ্জনা
এই প্রকাশ, অপ্রকাশ, গুপ্ত নিভৃত উৎসব
সহস্র মেঘ ও বর্ষা হেমন্ততুষারে আমি ফুটিয়েছি
একখানি ফুল,
এ আমার জল ও মাটির কাজ, গোপন হাতের মুদ্রা
দু’চোখের জলে আমি শিখেছি নিজের এই
আঁকাবাঁকা দীন হস্তলেখা।