ক্ষুধা

আমার শরীরে চোখে হৃদয়ে কেবল জ্বলে ক্ষুধা,
ক্ষুধার দীর্ঘ গ্রীবা স্থবির জন্তুর মতো মেলে দেয় লোলুপতা, অভ্যন্তরে
হৃদযন্ত্রে, মস্তিষ্কের সেলে ক্ষুধার তীব্র নখ ভয়ংকর জ্বলে
যেনো এক সর্বাঙ্গে সহস্র চোখ মাছি ঘুরে ঘুরে আমার
চোখের ভিতর থেকে মাংস তুলে খায়, আমার হৃদয় থেকে
তুলে খায় সুমিষ্ট গোলাপ, আমার বুকের নীচে জ্বলে
নির্মম ক্ষুধার আগুন;
সে আমার বুকের শোণিত সব টেনে নেয়, কণ্ঠনালী
মুখের ভিতর থেকে সমস্ত নিসৃত রস ক্রমশ পুঞ্জিত হয় তার
প্রকাণ্ড গহ্বরে, নৃশংস জঠরে তবু অনিঃশেষ ক্ষুধার আগুন, তবু ক্ষুধা
শিরায় শিরায়, রোমকূপে দেয় কঠিন কামড়। আমার পকেট থেকে একে
একে বের করে দেই সব গোপন খাদ্য, পানীয়, হোটেল ক্যাবারে থেকে
সংগৃহীত ভোজ্যদ্রব্য, মাদক, বিপুল শস্যরাশি, সবুজ প্রান্তর থেকে ছিঁড়ে আনা
ফল তুলে দেই প্রতিদিন সেই অদৃশ্য রাজার হাতে, শূন্য হয় বিপুল ভাঁড়ার,
পরিপূর্ণ রসদশালা, তবু চোখের সম্মুখে শুধু
রসদহীন ক্ষুধার্ত সৈন্যের মিছিল, তাদের ক্রোধিত মুখ
বন্দুকের উদ্যত নালার মতো আমাকে, আমাকে দেখো বিদ্ধ করে রোজ।

আমার সমস্ত সুখ, ভালোবাসার কাছ থেকে প্রাপ্ত সমস্ত বসন্তগুলি
তুলে দেই তার হাতে, সম্মুখে শায়িত সেই বাঘের হাতে তুলে দেই সমস্ত
বৈভব, আমার নিঃস্বতা আজ আমাকেই গ্রাস করে শুধু, সেই
বিশাল বাঘ জুড়ে আছে আমার সকল
রাস্তা, চোখে তার জ্বলে এক বীভৎস আগুন। সেই ভীষণ
সম্রাট বাঘ আমার অস্তিত্বে বসে প্রত্যহ আমার বুক, চোখের নরোম অংশ
গালের কোমল সব ছিন্নভিন্ন করে করে খায়;