আমরা অনার্য

আমরা অনার্য- আজ এই কথা বলুক সবাই।
বাঙালী না বাংলাদেশি, হিন্দু না বৌদ্ধ মুসলমান
বন্ধ হোক এই সব অর্থহীন তর্কের প্যাঁচাল।
আমরা অনার্য, আজ এই কথা বলুক সবাই-

আর্য নয়, ফিরিঙ্গি, মোঘল নয় পাহাড়ি পাঠান,
আমরা অনার্য লোহু, এ-মাটিতে আদিম বসত।
এই মাটি, জল, নদী, সমতল ও-চরের ভূমি
সাক্ষী দেবে, বোলে দেবে আমাদের পরিচিত নাম।
আমাদের শ্রমের ঘামের জলে এ-মাটি ভিজেছে-
সাক্ষী দেবে ঘাসফুল, ফসলের পোঁয়াতি আদল।

কৃষিসভ্যতার আদি সোনালিমা পতাকা উড়িয়ে
আমরাই বাজিয়েছিলাম স্নিগ্ধ জীবনের বাঁশি।
সুষম বণ্টন আর গ্লানিহীন শ্রমের সময়
দিয়েছিলো আমাদের আনন্দের উন্মাতাল দিন।

আমরা দেখিনি আগে বৈষম্যের বৈদিক কুঠার,
শোষনের কালো চাকা, ক্ষমাহীন করাল চাবুক,
আমরা দেখিনি কোনো মানুষের রক্তমাখা দাঁত।
শিল্পের নিমগ্ন তারে ছিলো রাখা শোভন আঙুল,
আমাদের কণ্ঠে ছিলো প্রাকৃতিক সুরের সৌরভ,
আর ছিলো বুকজোড়া আদিগন্ত নগ্ন ভালোবাসা।

সুদূরে আঙুল তুলে তীর্থভূমি কে দ্যাখায় ওই?
আমাদের তীর্থ আজো পরিপূর্ন ফসলের ক্ষেত,
আমাদের ধর্ম আজো ফসলের সুষম বণ্টন-
হোক তবে রুগ্ন এই ফসিল রাত্রির অবসান।

আমরা অনার্য, আজ এই কথা বলুক সবাই,
টেবিলের তর্কগুলো গিলে ফ্যালো যার যতটুকু।
জীবনের আনাচে কানাচে যারা বিদ্বেষের বিষ
ছড়িয়েছে বিভেদের রঙমাখা সোনালি বাতাস,
তাদের বিপক্ষে হাত প্রতিবাদে হোক একত্রিত,
আমরা অনার্য- আজ এই কথা বলুক সবাই।

আমাদের পেশী ছিলো, আজো আছে বন্দি শস্যক্ষেত,
ভ্রান্ত সব আইনের জালে বন্দি জিভ ও জবান।
সনাতন পাকস্থলি অধিকাংশ অপূর্ণ রয়েছে,
আর খাদ্য জমে আছে কতিপয় তস্করের ঘরে,
অকারনে অর্থহীন চর্বি মেদে ছেয়ে গেছে দেহ।
কে তুমি শেখাতে চাও মানুষের ভিন্ন বিভিন্নতা?

সামনে বাড়িয়ে আঙুলের বৈষম্য দ্যাখাও?
কে তুমি নাড়িয়ে জিভ অস্বীকার করা সাম্য-শ্লোক?
দাঁড়াও সমুদ্র তীরে, চেয়ে দ্যাখো জলের বিস্তার,
তাকাও নীলিমা নীলে, দ্যাখো নীল বিশাল উপমা
সম্মিলিত মানুষের, আর দ্যাখো বৈশাখের ঝড়-
তোমার বিকল্প তুমি, আর সব মহান ভনিতা।

যেখানে যাবার কথা ভেবেছিলা গুহার মানুষ,
যাইনি সেখানে, আজ সভ্যতার সিঁড়ি ভেঙে
আমরা এসেছি এক আনবিক ব্রীজের উপর,
ধংশের শ্বাপদ জিভ চারিপাশে লকলক জ্বলে।

পাললিক মাটি, জল, অরন্য ও শস্যের সন্তান,
তাকাও সূর্যের দিকে, শিখে নাও বিপুল দহন।
আত্মার তরে ফিরে জ্বলে ওঠো রক্তের ভাষায়-
ভাসায় কে, মাটতে শিকড় যার রয়েছে প্রোথিত!!

০৭.১২.১৯৯৪ মোংলা বন্দর