মধ্যরাত

মেয়ে দুটি মাঝরাতে ফেরে।
পা জড়িয়ে আসে ক্লান্তি, অবসাদ রক্তের ভেতরে,
গা থেকে উপচে পড়ে অচেনা অনেক ঘ্রান-
মা, দরোজা খোলো মাগো…

দূরের জাহাজে সিটি বাজে,
আকাশে প্রাচীন চাঁদ পৃথিবীর
এখনো সুন্দর,

এখনো জোয়ার এসে
শস্যক্ষেতে রেখে যায় পাললিক প্রেম।
শুধু, রাত হলে নোনা ঘ্রান, ক্ষমাহীন পাকস্থলি,
প্রতিদিন অচেনা দুয়োর-

মাগো, দরোজা খোলো, মা…
বাইরে ক্ষুধার খরা, স্তব্ধ অন্ধকার।
ডাস্টবিন আলোকিত কোরে আছে
সভ্যতার মহান ভূমিকা।

সহস্র শিশুর পাঁজরের পুষ্টিহীন হাড়
বাজায় উজ্জ্বল সুর পারমানবিক বাঁশি।
মানুষের অকালমৃত্যুর বিনিময়ে নভোযানগুলো
ছুটে যায় সুদূরের গ্রহে-

মা, দরোজা খোলো মাগো…
মেয়ে দুটি মাঝরাতে ফেরে ছেলেটি ফেরে না-
রঙিন রাত্রির স্বাদ উছলে উতলে পড়ে
নগরের সুরম্য নিবাসে,
ঝকঝকে মুখগুলো কি সহজে হয়ে ওঠে শ্বাপদসংকুল!

রক্তমাখা ক্ষমতার হাতে পুঁজ, পোকা-ধরা ক্ষত
ছুঁয়ে আছে জীবনের সবকটি ফুল-

মাগো, দরোজা খোলো মা…

লাঙলের ফলার আঘাতে
মাটি থেকে উঠে আসে চকচকে ক্ষুধা,
বস্ত্রকলে ক্ষয়কাশ, জঙধরা শ্রমিকের হাতে
পাকা আপেলের মত অনিশ্চিত দিনমান।

সামান্য খাদ্যের ‘পরে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসংখ্য রুগ্ন থাবা,
অথচ রোদের রঙ অবিকল; সূর্য ওঠে,
বাতাসেরা বয়ে আনে নিসর্গের অমলিন ঘ্রান,
সভ্যতার স্তুতি কোরে প্রতিদিন ছাপা হয় অজস্র কাগজ।

(২৮.০১.১৩৯৪ মোংলা বন্দর)